ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে অনেকেই রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি ছুটে যান। অনেকে আবার স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে চলে যান দেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট, এমনকি বিদেশেও। এ ক্ষেত্রে বাস-ট্রেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আকাশপথে ভ্রমণ। এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও তুঙ্গে উঠেছে প্লেনের টিকিটের চাহিদা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি টিকিট এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট শেষ প্রায় ৯৫ শতাংশ। যদিও চাহিদা বাড়ায় টিকিটের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। সেজন্য বেশি ভাড়াই গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা বেশি থাকায় ৩ জুন ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। এ ছাড়া ৪ জুন ঢাকা-জেদ্দা ও ঢাকা-দাম্মাম রুটে দু’টি অতিরিক্ত ফ্লাইট উড়বে। কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে বিমানের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজার রুটেও টিকিটের একই অবস্থা। চাহিদার কথা মাথায় রেখে ঈদে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে অতিরিক্ত ৭টি, ঢাকা-রাজশাহী রুটে অতিরিক্ত ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। সবমিলিয়ে ঈদের সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ রুটে মোট ১১৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে জাতীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্স। এ সংখ্যা আগের বছর ছিল ৮০।
এ বিষয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে গড়ে ৮৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের টিকিট প্রায় ৯৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। ফ্লাইটভেদে সেটা শতভাগও শেষ। এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক তিনটি গন্তব্যে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছি। চাহিদা প্রচুর থাকায় টিকিটের দাম বেড়েছে।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ রুটে নির্ধারিত ফ্লাইটের বাইরে আরও ৬৩টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তারা বলছে, যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ মে থেকে ৪ জুন এবং ৮ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এসব ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এয়ারলাইন্সটির আন্তর্জাতিক অনেক রুটেও টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে গড়ে ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককের টিকিটের। আর অভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটের টিকিট সব এয়ারলাইন্সেরই বিক্রি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ঈদে টিকিটের চাহিদা অনেক। অতিরিক্ত ৬৩টি ফ্লাইট অভ্যন্তরীণ রুটে বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর রুটের টিকিট অনেকটাই শেষ। বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ অভ্যন্তরীণ রুটে শুধু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ঈদে তাদের কক্সবাজার রুটের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান এয়ারলাইন্সটির পরিচালক (মার্কেটিং) সোহেল মজিদ। তিনিও জানান, কলকাতা, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা তবে ভিন্ন কথা বলছেন আরেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের পরিচালক (মার্কেটিং) মেসবাহুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবারের ঈদে টিকিটের চাহিদা কম। গড়ে ৬০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। যদিও নভোএয়ার দেশের বাইরে শুধু কলকাতায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। তানজিলা ইসলাম জিনাত ঈদে স্বামীকে নিয়ে থাইল্যান্ড ঘুরতে যাবেন। তিনি দু’টি টিকিট ইতোমধ্যে কিনেছেনও। তানজিলা বলেন, অন্য সময়ে ব্যাংককের টিকিট জনপ্রতি ২০ হাজার টাকার কমে পাওয়া যায়। কিন্তু ঈদে ৫৮ হাজার টাকা দিয়ে দু’টি টিকিট কিনেছি। একটি টিকিটের দাম পড়েছে প্রায় ২৯ হাজার টাকা। সপরিবারে কুয়ালালামপুর যাবেন সিলেটের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা হেলন মিয়া। তিনিও একই কথা জানালেন। বললেন, ঈদে টিকিটের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। টিকিটের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এয়ারলাইন্সগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, যখন চাহিদা বাড়ে, তখন টিকিটের দাম বাড়ে। এয়ারলাইন্সের ব্যবসা এখানেই। এটাই নিয়ম।
এফএন/এমআর