ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও সরকারি দফতরগুলো তাতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তেমন কোনো কাজে আসছে না। সরকারের ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন সভা-সেমিনার, অনুষ্ঠানে পাটপণ্যের ব্যবহারও চোখে পড়ে না। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাসে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) পাটপণ্যের বিক্রি গড়ে ৪ লাখ টাকার মতো। যদিও তাদের প্রত্যাশা আরো কয়েক গুণ। কিন্তু হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি সরকারি দপ্তর বহুমুখী পাটপণ্য কিনছে। ফলে বহুমুখী পাটপণ্য বিপণন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হতাশ। কারণ সরকারি দপ্তর থেকে পাটপণ্য নেওয়ার অর্ডার তেমন মিলছে না। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও ব্যক্তিগতভাবে কাউকে উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে পাটপণ্য কেনার বিষয়ে তেমন আগ্রহী হন না। তবে সরকারি কর্মকর্তার বাইরে অনেকেই দেখতে এবং কিনতে বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনীতে যায়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বহুমুখী পাটপণ্য ব্যবহার করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, উৎপাদিত পাটপণ্যের সহজলভ্য করতে জেডিপিসিতে একটি প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। জেডিপিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বহুমুখী পাটপণ্য কেনা যাবে। আর কেনা পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতিও আছে। চিঠিতে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটপণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে জেডিপিসির উদ্যোক্তাদের তৈরি পাটের বহুমুখী পণ্য ক্রয় ও ব্যবহার করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজেও পাটজাত পণ্য কেনার অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফা মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠানো হলেও বাস্তবে তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। জেডিপিসির প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রে ২৮২ ধরনের পাটপণ্য রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠানে যে ধরনের পুরস্কার কিংবা উপহার দিয়ে থাকে, তার সবই জেডিপিসিতে আছে এবং তা সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফাইল ফোল্ডার। প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রে তা মানভেদে ১৫০ থেকে শুরু করে এক হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। একটি টিস্যু বক্সের দাম ৩০০ থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকা। পেন হোল্ডারের দাম ৯০ থেকে ১৫০ টাকা। ডেস্ক ফাইল ৫০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বহুমুখী পাটপণ্য হিসেবে ব্যাগের মানও বেশ ভালো। একটি ব্যাগের দাম ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। সরকারি দপ্তরে যেকোনো অনুষ্ঠানে ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু পাটের তৈরি ব্যাগের প্রতি কর্মকর্তাদের আগ্রহ নেই।
সূত্র আরো জানায়, বহুমুখী পাটপণ্য সরকারি দপ্তরে তেমন ব্যবহার না হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে- দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততার কারণে কর্মকর্তারা নতুন কোনো পণ্য নিতে চান না। তাছাড়া জেডিপিসিতে যে বহুমুখী পাটপণ্য পাওয়া যায়, সেটি এখনো ততোটা জানাজানি হয়ে ওঠেনি। পাশাপাশি এখান থেকে পণ্য কিনলে কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ওসব কারণে এক সরকারি সংস্থা আরেক সরকারি সংস্থা থেকে বহুমুখী পাটপণ্য কিনতে অনীহা প্রকাশ করে। বর্তমানে পাট দিয়ে তৈরি বহুমুখী পণ্যের মধ্যে আছে টিস্যু বক্স, কলমদানি, চাবির রিং, ব্যাগ, ফোল্ডার, গৃহসজ্জার জিনিস, লেডিস ব্যাগ, পার্টস, মানিব্যাগসহ ২৮২ ধরনের পাটপণ্য। ওসব পণ্য সরকারি দপ্তরে অনুষ্ঠিত যেকোনো সভা-সেমিনার কিংবা অনুষ্ঠানে দেয়া যেতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি কাউকে কোনো গিফট দিতে চায়, সেক্ষেত্রে বহুমুখী পাটপণ্য আদর্শ উপহারসামগ্রী হতে পারে। বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। তবে তা জনপ্রিয় হতে সময় লাগছে। যে কারণে জেডিপিসির বিক্রির প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে উঠছে। তবে আশা করা যায় এর উন্নতি ঘটবে। পাটপণ্য তৈরির জন্য জেডিপিসির নিবন্ধিত ৬শর বেশি প্রতিষ্ঠান আছে। মূলত তারাই এসব পণ্য অর্ডার পাওয়ার পর তৈরি করে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জেডিপিসির পরিচালক মাইনুল হক জানান, জেডিপিসি তো কাউকে বহুমুখী পাটপণ্য ব্যবহার করতে চাপ প্রয়োগ করতে পারি না। শুধু অনুরোধ করতে পারে। ইতিমধ্যে পাটপণ্য কেনার জন্য সরকারি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। জেডিপিসি থেকে অবশ্য ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে। আশা করা যায় কর্মকর্তাদের মধ্যে এই আগ্রহ দিনে দিনে বাড়বে।
এফএন/এমআর