আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গণসংযোগ কালে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের বরিশাল শেবাচিম, বরগুনা সদর ও আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার তালতলী শহরে ও লাউপাড়া বাজারে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাগেছে, শুক্রবার বিকেল ছয়টার দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও আওয়ামীলীগ মনোনতি প্রার্থী রেজবি-উল-করিব জোমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনুসহ শতাধীক কর্মী সমর্থক লাউপাড়া বাজারে গণসংযোগ করে চলে যায়। আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেজবি লাউপাড়া বাজার ছেড়ে যাওয়ার পরে তার সমর্থক সোনাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আকন নৌকার পক্ষ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টুর উপস্থিতিতে তার সমর্থক নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী ও তার ভাই মোঃ জলিল ফরাজী তাকে গালাগাল করে। এ খবর পেয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেজবি তার কর্মী সমর্থক নিয়ে লাউপাড়া বাজারে আসে। এ সময় দু’প্রার্থীর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আকনকে গালমন্দ করার বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে উভয় পক্ষের কর্মী- সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনার রেশ ধরে রাত সাড়ে আটটার দিকে তালতলী শহরে দু’পক্ষের মধ্যে আবারো লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা সাবেক তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ ফজলুল হক জোমাদ্দারের গাড়ী ভাংচুর করে। প্রায় আড়াই ’ঘন্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত সফিক জোমাদ্দার (৩৬), ইলিয়াস জোমাদ্দার (৩০), সুমন হাওলদাার (২৫), আনোয়ার মৃধা (৪০), রাজু শরীফ (৩০), জাকারিয়াকে (৩৫) বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে এবং নাসির হাওলাদার (৩৬), জালাল (৪৫), রব মিয়া ও তারিক হাওলাদারকে বরগুনা সদর হাসপাতালে এবং ইদ্রিস মোল্লাকে (৫০) আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত সিদ্দিক তালুকদার, বারেক মৃধা, ছগির আকন, জাকির শরীফ, আবদুল বারেক, নান্নু মিয়া, আইউব গাজী, এ্যাড. সুশান্ত কুমার, মনির বেপারী ও বেল্লাল আকনসহ বাকীদের তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক ছিকিৎসা দেয়া হয়। তালতলী শহর ও লাউপাড়া বাজারে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজনকে ধাওয়া করে। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজনও পাল্টা তাদের ধাওয়া করেছে। এতে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেলে নিক্ষেপে লাউপাড়া বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পক্ষের অনেক লোক আহত হয়েছে।
সোনাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আকন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুর সমর্থক নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল ফরাজী সাধারণ মানুষকে নৌকায় ভোট দিতে নিষেধ করেন। আমি তার এ কথার প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গালাগাল করে লাঞ্চিত করার জন্য তেড়ে আসেন।
তালতলী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী নৌকায় ভোট দানে নিষেধ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আকনের সাথে আমার ছোট ভাই জলিল ফরাজীর নির্বাচন বিষয় কথা কাটাকাটি হয়েছে। এ ঘটনার জের ধরে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেছে।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টার সমর্থক নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী সাধারণ মানুষকে নৌকার ভোট দিতে নিষেধ করে। তার এ কথার প্রতিবাদ করলে তিনি ও তার লোকজন মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আকনকে গালাগাল করেছে।
আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী মোঃ রেজবি-উল –কবির জোমাদ্দার বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুর সমর্থক নৌকা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়ে তিনি নৌকায় ভোট না দেয়ার জন্য সাধারণ ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে।
স্বতন্ত্রী প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করা জন্য তার লোকজন দিয়ে আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা করেছে।
তালতলী থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর