ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর পোশাকের বাজারগুলোও ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বেচাকেনা জমে উঠায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে নিউ মার্কেট এলাকার বিপণী বিতানগুলো।
ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার (২৪ মে) নিউমার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিউ মার্কেট মোড় পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাত ও দোকানগুলোয় বেচাকেনা শুরু হয়; দুপুরের পর ভিড় ভেড়ে যায়। দেশ-বিদেশি ফ্যাশন হাউজের পাঞ্জাবির জন্য সুপরিচিত রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি দোকানগুলো সকাল ৯টা থেকে ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। শতাধিক পাঞ্জাবির দোকান রয়েছে এ এলাকায়। পাশের প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স, কাদের আর্কিড, খান প্লাজা, লাটিমি শপিং কমপ্লেক্স, জাহান ম্যানশন শপিং কমপ্লেক্স, গ্লোব শপিং সেন্টার, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটেও রয়েছে পাঞ্জাবির সমাহার।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির অধিকাংশ দোকানেই শোভা পাচ্ছে দেশি কারখানায় তৈরি পাঞ্জাবির পাশাপাশি ভারতীয় হরেক রকম পাঞ্জাবি। ছোট-বড় সবার জন্য সাড়ে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার এমনকি ৪ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি রয়েছে এসব শোরুমে। খাদি বিতানের বিক্রেতা ইয়াসির বলেন, তাদের অধিকাংশ পাঞ্জাবিই ভারত থেকে আমদানি করা করা। কাতান কাপড়ের ওপর বিভিন্ন রকম কারুকাজ করা ভারতীয় পাঞ্জাবীগুলোর দাম এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
ঈদ সামনে রেখে এক সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা জমে উঠেছে জানিয়ে ইয়াসির বলেন, বেচাকেনা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। বেচাবিক্রি নিয়ে একই কথা বলেন মোনালিসা ফ্যাশনের সেলিম মিয়া। তার দোকানেও অধিকাংশ পাঞ্জাবি ভারত থেকে আমদানি করা। আমাদের দোকানে ৫০ শতাংশ ওপর পাঞ্জাবিই ভারত থেকে আমদানি করা। দেশি পাঞ্জাবির চেয়ে ভারতীয় পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি, দামও তুলনামূলক বেশি। এবারের ঈদে সুতির পাঞ্জাবির দিকেও ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে, বলেন সেলিম মিয়া। এসব পাঞ্জাবির দোকানে ছোটদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। সায়েন্স ল্যাব থেকে একহাজার ১০০ টাকায় দাদার জন্য একটি সুতির সাদা পাঞ্জাবি কিনেছেন দিদার হোসেন নামে একজন। এই ক্রেতা বলেন, নিউ মার্কেট ও সায়েন্স ল্যাব এলাকার পাঞ্জাবিগুলোর দাম হাতের নাগালে রয়েছে। তবে গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটে আরও কম দামে পোশাক পাওয়া যায়। ঈদ সামনের রেখে কেনাকাটা করতে গিয়ে নিউমার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনী চক এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহিদুর রহমান; স্ত্রীর জন্য থ্রি পিছ, একবছরের মেয়ের জন্য কিনেছেন ফ্রক। তিনি বলেন, অনেক ঘুরাফেরা করে ক্লান্ত হয়ে কিছু প্রয়োজনীয় পোশাক কিনলাম। ঈদ উপলক্ষে দাম একটু বেশি হলেও পণ্যের মান ভালো। অন্য বছরের তুলনায় ডিজাইনেও বৈচিত্র্য আছে।
প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্সে পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে ওড়না, হিজাব, থ্রি পিচ, থান কাপড়সহ হরেক রকম পোশাক বিক্রি হচ্ছে। পাশের কাদের আর্কেড ও খান প্লাজায় প্রস্তুত শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও ট্রাউজার পায়জামার দোকান রয়েছে। ইউসুফ নামের একজন প্যান্ট বিক্রেতা বলেন, ঈদে পাঞ্জাবি ও শার্টের ব্যাপক চাহিদা বাড়লেও জিন্স প্যান্টের দিকে ক্রেতারা বাড়তি ঝোঁক দেখাচ্ছেন না। অন্য সময়ের মতোই চলছে তাদের বেচাকেনা। তারেক মাহমুদ নামের আরেকজন শার্ট বিক্রেতা জানান, নিজস্ব কারখানায় ১২টি মেশিন বসিয়ে এআর ব্রান্ড নামে শার্ট ও টাই তৈরি করেন তিনি। শার্টের দাম থাকে ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। কাপড়ের দাম ও মানের কারণেই দামের তারতম্য হয়।
এবারের ঈদে আশানুরূপ বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারেক। এই মার্কেটে মোশাররফ হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি পুরো নিউ মার্কেট ও নূরজাহান মার্কেটসহ এ অঞ্চলের দোকানগুলো ঘুরে দেখতে এসেছেন। শনিবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হবেন। গাউছিয়া মার্কেটে পঞ্চাশোর্ধ হামিদা আকতার বলেন, নিজের মা, শ্বাশুড়ি ও এক ফুফুর জন্য তিনি তিনটি কাপড় কিনেছেন। দাম ধরা হয়েছে প্রতিটি ১৮শ টাকা করে। এই এলাকার ফুটপাতগুলোর মতো নিউ মার্কেট কমপ্লেক্সের ভেতরে চক্রাকার চত্বরগুলোতেও বসেছে বাহারি রঙের পোশাকের পসরা। শো-রূমগুলোতেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা। তবে নারী ক্রেতারা থ্রি পিস ও শাড়ির জন্য বেশি ছুটছেন চন্দ্রিমা মার্কেটের শোরুমগুলোতে।
এফএন/এমআর