ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে সাতক্ষীরা ও পাবনা থেকে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে এক স্থান থেকে ২৯ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, আটকদের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সদস্য রয়েছেন। শুক্রবার সকালে কলারোয়া থানার কাছে একটি ভবন থেকে তাঁদের আটক করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
র্যাব-৬ সাতক্ষীরা সিপিসি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ মাহমুদুর বলেন, আজ (গতকাল শুক্রবার) প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সামনে রেখে পরীক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কলারোয়া উপজেলা সদরের সোনালী সুপারমার্কেট ভবনের কিডস ক্লাব সেন্টারে জড়ো হন। চক্রের সদস্যরা রাতভর এবং সকালে মোবাইল ফোনে তাদের কাছে আসা প্রশ্নপত্র ও উত্তর ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেয়। পরীক্ষার্থীরা তা শিখে নিতে থাকেন। র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, এই খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা ভবনটি ঘিরে ফেলেন। সেখান থেকে প্রথমে ২২ জন এবং পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরো সাতজনসহ মোট ২৯ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন ব্যাংক কর্মকর্তাও রয়েছেন।
র্যাব জানায়, ঢাকায় একটি প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এজন্য সিন্ডিকেটের হাতে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বাকি টাকা পরীক্ষা শেষে দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, রাতে ও সকালে যেসব প্রশ্ন ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেওয়া হয়েছে আর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন এসেছে, তা হুবহু মিলে গেছে।
পাবনা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে পাবনায় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, শহরের রাধানগর এলাকায় শুভ ছাত্রাবাস থেকে একটি চক্র আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করছে, এমন সংবাদে শুক্রবার সকালে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ওই ছাত্রাবাস থেকে পরীক্ষা চলাকালীন জালিয়াতিকালে হাতেনাতে ৪ জন বহিরাগত যুবককে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইস, মাস্টার কার্ড, ব্যাটারি, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটকরা হলেন- পাবনার সাঁথিয়ার উপজেলার মৃত হযরত আলীর ছেলে শাকিব উদ্দিন, একই উপজেলার জাকির হোসেন লেবুর ছেলে আবদুস সোবাহান, চাটমোহর উপজেলার আবদুস সামাদ সরকারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও একই উপজেলার সাহেব আলীর ছেলে সানাউল্লাহ সানি। পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক যুবকেরা পরীক্ষায় জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরো জানান, পরীক্ষা চলাকালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৪ পরীক্ষার্থীকেও আটক করা হয়েছে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তাদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাফিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরীক্ষার জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের সব বিভাগ আমাদের এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কাজ করেছে। প্রতিটি কক্ষে এবং সেন্টারে আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছিলাম। সামান্য কিছু সমস্যা ছাড়া পরীক্ষা সুষ্ঠু হয়েছে। আমাদের এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে অসদুপায় অবলম্বনকারীদের যে তথ্য পেয়েছি সেখানেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাবনা জেলার ৬২টি কেন্দ্রে মোট ৫১ হাজার ২৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন।
এফএন/এমআর