ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও অনলাইনে ও অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট কাটতে না পারার অভিযোগ করেছেন টিকেটপ্রত্যাশীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে টিকেট বিক্রি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাশপাশি বিক্রি চলে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমেও। আগাম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিন বিক্রি হয় ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকেট। সব চেয়ে বেশি ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয় কমলাপুর রেলস্টেশনে।
অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপ থেকে টিকেট কিনতে না পেরে অনেকে কাউন্টারে চলে এসেছেন। রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনতে ভোর ৫টায় কমলাপুর স্টেশনে আসেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাহিদ হাসান। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহীর ১ জুনের টিকেটের জন্য বাসার কাছে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অনেক বার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকেট কিনতে পারিনি। এজন্য কমলাপুর চলে আসলাম। পরে বেলা দেড়টার দিকে কাঙ্খিত টিকিট পেয়েছি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আমানুল্লাহ বগুড়া যাওয়ার জন্য অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকেট পাননি। তিনি বলেন, লালমনি এক্সপ্রেস এবং রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য চেষ্টা করেছি। সার্ভার ওপেন হয়। ট্রেন সিলেক্ট অপশন পর্যন্ত যাওয়া যায়। এরপর থেকে শুধু লোড নিতে থাকে। টিকেট আর আর কাঁটা যায় না। এজন্য এখানে চলে এসেছি। দেখি টিকেট পাই কিনা। একই অভিজ্ঞতা রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদের; খুলনা যাওয়ার টিকেটের জন্য কমলাপুরে আসেন তিনি। তার ভাষ্য, অ্যাপস খোলেই না। দুই দিন চেষ্টা করে বিফল হয়েছি। বাধ্য হয়ে কাউন্টারে দাঁড়ালাম। জয়পুরহাটে যাওয়ার জন্য দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য এসেছেন জিয়াউর রহমান।
রেলওয়ের মোবাইল অ্যাপসে টিকেট কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ জিয়া বলেন, এটা শুধু শুধু করেছে। এতবার চেষ্টা করলাম, খালি ‘নট ফাউন্ড’ দেখায়। এই অ্যাপসে চেষ্টা না করাই ভালো। এইডা জনগণরে বোঝানোর জন্য দিছে আর কি। তারা দেখাচ্ছে যে তারা আপডেট হয়েছে। এ ব্যাপারে সিএনএসবিডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কবিরুল আলম বেলা সাড়ে দশটার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিদিন ১১ হাজার টিকেট থাকে অনলাইনে বিক্রির জন্য। টিকেট বিক্রির প্রথম দিন মোট টিকেটের ৭১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এতো অভিযোগের এতগুলো টিকেট কীভাবে বিক্রি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুধু স্টেশন দেখভাল করি। বিক্রির তথ্য দিয়েছে সিএনএসের মূল কার্যালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগ। তারা এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে। সাধারণ টিকেট পাওয়া গেলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট সকালেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে কাঙ্খিত টিকিট ও পাচ্ছেন না অনেকে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার চারটি টিকেটের জন্য এসেছেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা শাহ জাহান খান। তবে কাঙ্খিত টিকেট পাননি তিনি। তিনি বলেন, এসি চেয়ার, প্রথম শ্রেণি কোথাও সিট পাইনি। জোরাজুরি করার পর তিনটি টিকেট দিয়েছে আমাকে। এর মধ্যে এসি কেবিনে দুটি সিট আবার দুই রুমের। আমি যাব এক কেবিনে, স্ত্রী যাবে আরেক কেবিনে। আরেকটি শোভন চেয়ারের সিট দিয়েছে আরেক বগির। এখন একেকজন একেক কামরায় যেতে হবে। টিকেট কাউন্টারে এসি টিকেট কিনতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। এজন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটা বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকেট বিক্রি হবে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে আট হাজার ১৫১টি টিকেট বিক্রি হবে।
এছাড়া বিমান বন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৮৭৯টি টিকেট বিক্রি হবে। এরমধ্যে দুই হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে এবং দুই হাজার ৩৩১টি টিকেট কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকেট বিক্রি হবে। এরমধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হবে। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকেট বিক্রি হবে। ৬৪৪টি টিকেট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকেট কাউন্টারে দেওয়া হবে। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৫৪৮টি টিকেট বিক্রি হবে। এরমধ্যে দুই হাজার ২৫১টি টিকেট অনলাইনে এবং দুই হাজার ২৯৭টি টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হবে। বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকেট। বিশেষ ট্রেনের টিকেট বিক্রি হবে ২৪ মে থেকে।
এফএন/এমআর