ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঝালকাঠির রাজাপুরে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দুঃস্থ ও অসহায়দের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ভিজিডি) কার্ড রয়েছে বিত্তবানদের হাতে হাতে। কার্ড প্রদানের কিছু শর্ত থাকলেও অর্থের বিনিময়ে এ কার্ড বিত্তবানদের দিচ্ছেন অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এ কর্মসূচির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার দরিদ্ররা। বিত্তবানরা ভিজিডি’র চাল তুলে নিজেরা না খেয়ে তা হাঁস-মুরগি ও কবুতরকে খাওয়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাসী মো. মাহাবুবের স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। জেসমিন প্রতি মাসে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল তুলে তাঁর শতাধিক কবুরতকে খাওয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্প্রতি একই এলাকার দরিদ্র মো. নান্নু হাওলাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী মো. মাহাবুবের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। জেসমিন বাড়ির ছাদে কবুতর পালেন। তাঁর বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক কবুতর রয়েছে। এছাড়া কৃষি জমি, বাগান, ব্যাংকে নগদ টাকা ও দুই ইউনিটের একটি পাকা বাড়ির মালিক এই দম্পতি। এর পরেও জেসমিন আক্তারের নামে ভিজিডির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই কার্ড দিয়ে তিনি প্রতি মাসে ভিজিডির চাল তুলে কবুতর ও হাঁস-মুরগিকে খাওয়ান।
এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন। তিনিও একটি দোতলা পাকা বাড়ির মালিক। সেই সঙ্গে তাঁর চাষের জমি ও নগদ অর্থ রয়েছে। বিত্তবান এই ব্যক্তিকেও ভিজিডি কার্ড দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। অপরদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতদরিদ্র কহিনুর বেগম (৫০)। বিধবা এই নারী জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও তাঁর ভাগ্যে ভিজিডির কার্ড বা অন্য কোনো সরকারি সহায়তা জোটেনি। তিনি উপজেলা সদরের হোটেল-রেস্তরায় প্রতি কলস ৩ টাকা করে পানি সরবরাহ করেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনমতে ভাঙা ঘরে দিন কাটে কহিনুরের। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও করাত কল শ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম (৪৮)। হতদরিদ্র এই মানুষটি একাধিকবার আবেদন করলেও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি কোন সহায়তা পাননি। সুবিধা বঞ্চিতরা বলছেন, টাকা দিতে না পারলে সরকারি সহায়তা মেলে না। যারা টাকা দিতে পারেন, তাদেরকেই জনপ্রতিনিধিরা ভিজিএফ ও ভিজিডির কার্ড দেন। বিত্তবান হয়েও কিভাবে ভিজিডির কার্ড পেলেন? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ১ নম্বর ওয়ার্ডের জেসমিন আক্তার। তবে তাঁর স্বামী মাহাবুব বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও বর্তমানে একটু সমস্যায় আছি। তাই স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী আমার বন্ধু মজিবর মৃধার কাছে বলেছিলাম। তিনি আমাকে একটি কার্ড জোগার করে দিয়েছেন।’ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রকল্পগুলো নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা সদরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘সরকার দরিদ্র মানুষদের ভালো রাখতে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বহু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অথচ কিছু দুষ্ট লোকের কারণে প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে সরকারের সেই সহায়তা পৌঁছায় না। এর ফলে সরকারের মহতি এই কর্মসূচিগুলোর পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের আরো কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন।’
এসব বিষয়ে রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, ‘১ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব দীর্ঘ ১৫ বছর প্রবাসে থাকলেও গত ১ বছর ধরে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন এবং শুনেছি বর্তমানে তাঁর অবস্থা ভাল না। তাই তাকে ভিজিডির কার্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেনকে দলীয় বিবেচনায় কার্ড দেওয়া হয়েছে।’ হতদরিদ্রদের তালিকা থেকে বাদ পরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শত শত কার্ড দিতে গিয়ে একটু ভুলত্রুটিতো হতেই পারে।’ ইউএনও সোহাগ হাওলাদার জানান, ‘ভিজিডির তালিকায় বিত্তবানদের নাম আসার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মহিলা অধিদপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তালিকা থেকে বিত্তবানদের নাম বাদ দিয়ে দরিদ্রদের নাম নিশ্চই অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরআর/এমআর