বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বানারীপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে বসত ঘর হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ভানান গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবার। অপরদিকে ঘুর্ণিঝড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানা গেছে, ১৫ মে বিকেল ৪টায় বানারীপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড়ে বসত: ঘর হারিয়ে সৈয়দকাঠী ইউনয়নের ভানান গ্রামের অসোহায় দরিদ্র খেয়া মাঝি সালাম ও দিনমজুর সাইদুল ইসলাম তাদের পরীবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্থাভাবে থাকা দরিদ্র খেয়া মাঝি সালাম ও দিন মজুর সাইদুল ইসলাম নতুন করে বসত ঘর তুলতে না পেরে বর্তমানে তারা পুরাতন ভাংঙ্গ টিনের সাফরা দিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাটন করছেন। তারা জানান, অর্থাভাবে সতুন করে ঘর তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় সরকারী ভাবে আর্থিক সাহায্য-সহযোগীতা পাওয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ভানান গ্রামের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম কাজল জানান, খেয়া মাঝি সালাম ও দিন মজুর সাইদুল ইসলাম’র বসত ঘর ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সরকারী ভাবে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগীতা করার জন্য উভয়ের নাম ইউনিয়ন পরিষদে তালিকা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নান মৃধা বলেন, ঘুণিঝড়ে যাদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তাদের ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ সহ নাম তালিকা করার পাশাপশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ ও ত্রাণ কর্মকর্তা অয়ন সাহার মাধ্যমে ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওলিউল আলম, ত্রাণ কর্মকর্তা অয়ন সাহা ও বিভিন্ন দপ্তররের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ মে বিকেলে ঘুণিঝড়ে বানারীপাড়া উপজেলা এলাকায় ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার পাশাপশি ফেরীর লঙ্গর ছিরে নদীর অপর প্রান্তে চলে যায় এবং পন্টুন ও গ্যাংওয়ের রশি ছিরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় ফেরীঘাটে থাকা বানারীপাড়া-নলশ্রী লাইনের একটি ট্রলার ডুবে যাওয়ার পাশাপশি তিনটি ট্রলার ফেরীর পল্টুনের ওপর উঠে যায়। এ সময় ট্রলারের সুকানী মোক্তার হোসেন কোন রকম প্রাণে বেচে যায়। ফলে ফেরী ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপশি বানারীপাড়া-নলশ্রী-বাংলা বাজার লাইনের শতাধিক ট্রলার এবং খেয়া পাড়া-পাড়ের সময় যাত্রীরা মটরসাইকেল নিয়ে ওঠা-নামা করতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অবশ্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মচারীরা দায়সারা ভাবে ফেরী ও গ্যাংওয়ের ভাঙ্গা অংশ কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের চলা-চলের উপোযোগী করে দিয়েছেন।
এছাড়াও ঘুর্ণিঝড়ে উপজেলার বাইশারী সৈয়দ বজলুল হক বিশ^বিদ্যালয় কলেজ সহ ৩টি মাদরাসা, ৫টি স্কুল সহ অর্ধশতাধিক দোকান ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক কাচা ঘরের টিনের চালা উপরে যাওয়ার পাশাপশি ফেরীঘাটে থাকা খেয়া-পারাপারের টোল আদায় ঘর (যাত্রী ছাউনী) সহ ফুটপাতের ৩টি দোকান সন্ধ্যা নদীতে পড়ে যায়। এছাড়াও ঘুর্ণিঝড়ে বোর ধান, কলা, আম, পেপে, আমড়া ও সব্জীর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পাশাপশি সড়কের ওপর গাছ পড়ে দু’ঘন্টা ধরে বানারীপাড়া-নেছাড়াবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন এলাকায় ২০টি বিদ্যুতের খুটি ও অর্ধশতাধিক স্পটের বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে যায়। এছাড়াও ঘুর্ণিঝড়ে ঘরের চালার টিন উপরে পরে ইট ভাটার দুই শ্রমিক সহ ৮টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষয়-ক্ষতির ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রাথমিক তালিকায় ৫ কোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ ও ত্রাণ কর্মকর্তা অয়ন সাহা জানান, ১৫ মে বিকেলে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা তৈরী করে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও ঘুর্ণিঝড়ে বসতঘর ভেঙ্গে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সরকারী ভাবে নতুন করে ঘর নির্মান করে পূর্নবাসন করার পাশাপশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান।
জিএমআর/এমআর