ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সাবেক এই স্পিকার।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন বলেন, সর্বশেষ দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, ইনসুলিন ব্যবহারের পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। এরইমধ্যে তাঁর মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষতের জন্য মুখে প্রচ- ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না। জাউ খেয়ে কোনোরকমে জীবনধারণ করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বন্দি হওয়ার অনেক আগে থেকেই নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। একজন বর্ষীয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, তা খালেদা জিয়ার বর্তমান গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় উপলব্ধি করা যায়। কারাগারে অবস্থানকালে তাঁর কক্ষের বাথরুমে পড়ে গিয়ে প্রচ- ব্যথা পেয়েছেন তিনি। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতাসহ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাঁর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বহুগুণ বেড়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, মারাত্মক জীবন-বিনাশী জীবাণু দ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে খালেদা জিয়ার। এ ছাড়া ধারণা করা হয় যে, কারাগারে থাকার সময় সেখানকার পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা তাঁর হাড়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এমনিতে অনেক আগে থেকেই তিনি বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগতেন। এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধ ও হাতেও সম্প্রসারিত হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সাবেক স্পিকার বলেন, এসব শুধু অমানবিকই নয়, নিষ্ঠুর মনুষ্যত্বহীন মনেরও বহিঃপ্রকাশ। কারাগারের দূষণযুক্ত পরিবেশে তাঁর স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য একজন বন্দির মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আরো বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল নানা রোগে ভুগছেন। এরইমধ্যে তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি লন্ডনে চোখের অপারেশনও সম্পন্ন করেছেন। চিকিৎসকদের পরিভাষায় তিনি একজন বিশেষ পরিচর্যাসাপেক্ষ রোগী। সেই হিসেবে সুচিকিৎসার স্বার্থে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত পরিচর্যার সব সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি, যা সব সভ্য, গণতান্ত্রিক ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন দেশে নিশ্চিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, প্রকৃত ও যথাযথ সেবার অভাবে ক্রমান্বয়ে ঘাড়, মেরুদ- ও নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর এই দীর্ঘকালীন অসুস্থতা কেবল দীর্ঘকাল চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ও নিয়োজিত ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরই ভালোভাবে জানা আছে। নতুন কোনো চিকিৎসকদলের পক্ষে তাঁর সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থা একনজরে ও এক নিমেষে অনুধাবন ও নির্ণয় করা একেবারেই অসম্ভব। গভীর উদ্বেগের বিষয় এই যে, খালেদা জিয়ার কোনো সাজাই চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় জামিন না দিয়ে তাঁকে কারাগারে রাখা সম্পূর্ণরূপে সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী। এরইমধ্যে কেরানীগঞ্জে আদালত স্থানান্তরের এসআরও জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশ কিসের জন্য এবং কার জন্য করা হচ্ছে, তা জনগণের বুঝতে বাকি নেই। দেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনে এক মহাশৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ হয়েছে বলেই ন্যায়বিচার নিরুদ্দেশ হয়েছে। আর সে কারণে অন্যায় এবং অবিচারের এক চরম বহিঃপ্রকাশের ফলশ্রুতি হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া। অশুভ উদ্দেশ্যেই কারাগারে আদালত বসানো হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার যাতে চরম অবনতি না ঘটে, সেজন্য তাঁকে অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করান। বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো অত্যন্ত জরুরি। তাই আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর পছন্দনীয় হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল প্রমুখ।
এফএন/এমআর