আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক আছেন মাত্র দুইজন। দু’উপজেলায় ৩৯ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও ৩৬টি পদ শুন্য। তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ৭ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এন্ড হেলথ ক্লিনিকে কোন চিকিৎসক নেই। এতে ভেঙ্গে পরেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা। সামান্য অসুখ হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির যেতে হয় শহরের কোন হাসপাতালে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন এবং তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা।
জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী দু’উপজেলার তিনটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এন্ড হেলথ ক্লিনিকের ৩৯ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে ৫ জন। এর মধ্যে ডাঃ মোনায়েম সাদ প্রেষণে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে, শাকিলা আক্তার মাতৃত্বকালিন ছুটিতে, ইমদাদুল হক চৌধুরী টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেষণে, টিএইচ শংকর প্রসাদ অধিকারী, ডাঃ মোঃ শাহদাত হোসেন ও ডাঃ জিকু শীল কর্মরত। এ তিন জনের মধ্যে জিকু শীলকে বৃহস্পতিবার বরগুনা সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। টিএইচ শংকর প্রসাদ অধিকারী সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত। এখন একজন চিকিৎসক মোঃ শাহদাত হোসেনকে দিয়ে চলছে উপজেলার সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এরমধ্যে চিকিৎসক মোঃ মেসবাউল ইসলাম চৌধুরী আছেন কর্মরত। ওই একজন চিকিৎসক দিয়ে চলে দেড় লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। কুকুয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কোন চিকিৎসক নেই। গুলিশাখালী, গাজীপুর ও তালতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এন্ড হেলথ ক্লিনিকে কোন চিকিৎসক নেই। আমতলী ও তালতলীর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসক পদ খালী থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এদিকে গাজীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকে প্রায়ই তালাবদ্ধ। ওইখানে চিকিৎসক ও কর্মচারী নেই। উপ-কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুন সরকার ওই ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকলেও তিনি সপ্তাহে একদিন যান। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকায় মানুষের পটুয়াখালী ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রোগী-স্বজনদের চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে চরম অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগে দু’শ জন এবং আন্তঃবিভাগে গড়ে ৫৫-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু একজন চিকিৎসক দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা দেয়া খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টার ঘুরে দেখাগেছে, হাসপাতালে শত শত রোগী এসে ভির করলেও সকল চিকিৎসকদের কক্ষ তালাবন্ধ। রোগী ও তার স্বজনরা হাসপাতালের মেঝেতে পায়চারি করছে। অনেক মানুষকে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছে। একজন চিকিৎসক সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছেন।
গাজীপুর এলাকার সোহেল রানা বলেন, গাজীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুর সরকার দায়িত্বে থাকলেও তিনি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আসেন। বাকী দিনগুলি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তিনি আরো বলেন, অনেক রোগী এসে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র তালাবন্ধ দেখে চিকিৎসা না নিয়ে চলে যায়।
গাজীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুন সরকার সপ্তাহে দু’দিন যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে আনা হয়েছে।
রোগী রহিমন, নিলুফা ও তহমিনা বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। এসে দেখি একজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। এতে প্রচন্ড ভির রয়েছে। কোন মতে ডাক্তার দেখিয়েছি।
তালতলীর গাবতলী গ্রামের মো. আবদুল মাজেদ মাস্টার জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন চিকিৎসক না থাকায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামান্য অসুখ হলেও তাদের শহরের কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হয়। এতে যেমনি গরিব মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে তেমনি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ৩৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ২ জন চিকিৎসক রয়েছে। চিকিৎসক চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন গড়ে বর্হিবিভাগে দু’শ এবং আন্তঃবিভাগে গড়ে ৫৫-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু একজন চিকিৎসক দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। দ্রুত চিকিৎসক না দিলে আমতলী ও তালতলী উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হবে।
এমএইচকে/এমআর