ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পূর্বাঞ্চল রেলের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি দখল করে রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পাট কর্পোরেশন, আশুগঞ্জ ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ, খাদ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলের রয়েছে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে অবৈধ দখলে থাকা জমির একটা বড় অংশ মালিকানা নিয়ে মামলা জটিলতায় রয়েছে। আর ইজারা নিয়ে শর্ত অনুযায়ী খাজনা না দেয়ার ফলেও কিছু জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি শাখা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে সব মিলিয়ে জমি আছে ২৪ হাজার ৪৪০ একর। তা মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছে ১৭ হাজার ১৬৯ একর। বাকি ৭ হাজার ২৭১ একর জমি পড়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। সংস্থাটির মোট জমির ৮৫৪ একর রয়েছে অবৈধ দখলে, যার ৫২৬ একর দখলে রেখেছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে সবচেয়ে বেশি জমি অবৈধ দখলে রেখেছে সওজ অধিদপ্তর। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটি নরসিংদী-মদনগঞ্জ সেকশনে ২২৫ দশমিক ৫৪ একর ও হবিগঞ্জ জেলায় ১৬ দশমিক ৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দখলে আছে রেলওয়ের ১৩৩ একর জমি। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৬ একর, বন বিভাগ ৫ দশমিক ১৬, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২ দশমিক ৬, খাদ্য বিভাগ দুই, বারৈয়ারহাট পৌরসভা দশমিক ৩৩, ফেনী পৌরসভা দশমিক ছয় ও টিঅ্যান্ডটি বিভাগ, ফুলগাজী দশমিক ৩৩ একর জমি দখলে রেখেছে। তাছাড়া ঢাকা বিভাগে গণপূর্ত বিভাগ (ঢাকা জেলা) এক একর, নারায়ণগঞ্জের আইইটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ২ দশমিক ৩৮, দ্বিতীয় পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ৬ দশমিক ২৭, ফায়ার সার্ভিস ১ দশমিক ১, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬ দশমিক ৭, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ দশমিক ৪৫, পাট করপোরেশন ১২ দশমিক ৫৪ (নারায়ণগঞ্জ জেলা) ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৯৪ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। একইভাবে ঢাকা ওয়াসা দশমিক ২৯ একর, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ ১০ দশমিক ৩৬, গণপূর্ত বিভাগ ১৩, সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি দশমিক শূন্য ৫, সিলেটে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৭, মৌলভীবাজারে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ দশমিক শূন্য ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ ২৪ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। তার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাদ্য বিভাগ ১ দশমিক ২ একর, ইউনিয়ন পরিষদ দশমিক ১, আশুগঞ্জ খাদ্য বিভাগ ৬ দশমিক ৭৫, আখাউড়া খাদ্য বিভাগ দশমিক ৫, চিটাগং কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দশমিক ২৬ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অবৈধ দখলে রেখেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আরো ৩৫ দশমিক ৩৬ একর জমি।
সূত্র জানায়, রেলের পূর্বাঞ্চলে সাড়ে ২৪ হাজার একর জমির মধ্যে রেলওয়ে সরাসরি অপারেশন কার্যক্রমে ব্যবহার করছে ১৫ হাজার একর জমি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইজারা দেয়া আছে ৪ হাজার ৯৭২ একর। তার মধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ৪৮৮ একর জমি ইজারা দিয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। অবশিষ্ট জমি কৃষি, মৎস্য, নার্সারি/বনায়ন, সিএনজি স্টেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিয়েছে রেলওয়ে। পূর্বাঞ্চলে রেলওয়ের দখলাধীন অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৮৩ একর। তাছাড়া রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) জমিও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। ওই অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের ৩৯৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। দুই অঞ্চল মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর। তার ৩ হাজার ৮৪১ একরই রয়েছে অবৈধ দখলে।
এদিকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা অবৈধ জমির বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমদ জানান, পূর্বাঞ্চলে ৩০টির বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। একেক প্রতিষ্ঠান একেক কায়দায় জমিগুলো দখল নিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করা জমিগুলো নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। ফলে ওসব জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার বাইরে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় রেলওয়ের কাছ থেকে জমি ইজারা নেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওসব প্রতিষ্ঠান ইজারার শর্ত অনুযায়ী রেলকে টাকাও দেয় না, আবার জমির দখলও ছাড়ছে না। ওসব কারণে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মোট জমির একটা বড় অংশ অবৈধ দখলে চলে গেছে। তবে ওসব জমি দখলমুক্ত করতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে অবৈধ দখলে থাকা জমি সম্পর্কে রেলপথমন্ত্রী নূনলি ইসলাম জানান, অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে। প্রতি মাসেই বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।
এফএন/এমআর