আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী মফিজ উদ্দিন পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরকে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত প্রধান শিক্ষককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের সোনালী ব্যাংকের সামনে।
জানাগেছে, ২০১৭ সালের ২৭ মে কোন কারন ছাড়াই আমতলী মফিজ উদ্দিন পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম কবিরকে বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এলিজ বেগম চাকুরীচ্যুত করেন। পরে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়। প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম কবিরকে চাকুরীচ্যুত করে সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া সভাপতির এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন শাহ আলক করিব। উচ্চ আদালত বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এলিচ বেগমের আদেশকে অবৈধ ঘোষনা করে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু সভাপতি উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। এদিকে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির উচ্চ আদালতের আদেশ আমতলী সোনালী ব্যাংকে জমা দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের অনুকুলে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়। ওই সময় থেকে গত ১৬ মাস ধরে আইনি জটিলতায় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন ভাতা বন্ধ নিরসনে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। প্রধান শিক্ষককের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মহাপরিচালকের পক্ষে সহাকরী পরিচালক কাওসার আহম্মেদ গত ৬ মে বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরের যৌথ স্বাক্ষরে শিক্ষকদের বেতন ভাতা উত্তোলনের আদেশ দেন। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির ও বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরে বুধবার আমতলী সোনালী ব্যাংকে শিক্ষকদের বকেয়াসহ বেতন ভাতা জমা দেন। উচ্চ আদালত ও মহা পরিচালকের আদেশ অমান্য করে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান, সহকারী মৌলভী মাওলানা জাহাঙ্গির হোসেন, অফিস সহকারী বশির উদ্দিন ও নৈশ প্রহরী মোঃ জসিম উদ্দিন বেতন ভাতার সিটে স্বাক্ষর করেনি। ওই পাঁচ শিক্ষক বুধবার বিকেলে প্রধান শিক্ষককে সোনালী ব্যাংকে বেতন ভাতা জমা দিতে বাঁধা দেয়। নিয়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরকে বেধরক মারধর করে। স্থানীয়রা শাহআলম কবিরকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনার আমতলী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবিরকে কয়েকজন লোক মিলে বেধরক মারধর করেছে।
প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির বলেন, উচ্চ আদালত ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ মতে আমি বেতন ভাতা প্রস্তুত করে আমতলী সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে যাই। এ সময় সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও তার চার সহযোগীরা আমাকে বাঁধা দেয়। আমি তাদের বাধা উপেক্ষা করে বেতন ভাতার সিট ব্যাংকে জমা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করেছে।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমিসহ পাঁচ জনের বেতন ভাতার সিটে স্বাক্ষর না নিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বিলে স্বাক্ষর দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক বেতন ভাতার সিটে স্বাক্ষর নেয়নি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র বলেন, শাহ আলম কবিরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আকমল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, খবর পেয়েছি। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।