ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বেড়েই চলেছে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাত্রীভ্রমণ। ওসব যাত্রীকে আটক, জরিমানা আদায় করেও ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে টিকিট চেক করতে গিয়ে চেকাররা বিনা টিকিটের যাত্রীদের হাতে মারধরের শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ এবং ট্রেনে নিরাপত্তা জোরদারে প’স ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ই-প্রসিকিউশন চালু করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ই-সার্ভারের মাধ্যমে যাত্রীসেবা ট্রেনগুলোর টিকিট চেকিংসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আর লাইভ অভিযান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে যাবে। রেল কর্তৃপক্ষ তাতে বিনা টিকিটে ভ্রমণপ্রবণতা কমবে বলে মনে করছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রযুক্তিগত বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে চলন্ত ট্রেনে শুধুমাত্র যাত্রী নয়, টিকিট চেকারদের অনিয়মও চিহ্নিত করা যাবে। ওই প্রযুক্তিতে ভয়েজ রেকর্ডিংসহ অনিয়মের তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে পৌঁছে যাবে। ওই ডিভাইস দিয়ে ট্রেনে অবৈধ মালামাল উঠানো কিংবা সন্দেহজনক যাত্রীদের ছবিও উঠানো যাবে। এমনকি ট্রেনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অনিয়ম হলে তা ওই ডিভাইসে ধারণ করা যাবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে যাত্রীসেবায় দৈনিক ৩৫০টি ট্রেন নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু ওসব ট্রেনে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ যাত্রীই বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে। তাদের আটক-জরিমানা করার পরও এই অসাধুতা থামানো যাচ্ছে না। বরং ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় অর্ধেক যাত্রীই বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে। তার ওপর আসনের সমান সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে, দরজায় ঝুলে বা ছাদে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছে। প্রতিমাসে রেলওয়ের বাণিজ্য বিভাগ পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে শতাধিক অভিযান পরিচালনা করে। আর প্রতিবার কমবেশি এক কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার অসাধুতা রোধ করা গেলে রেলের আয় বহুগুণ বাড়তো।
সূত্র আরো জানায়, রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষে লোকবলের অভাবে টিকিট চেকিং অভিযান ঠিকমতো পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং জরিমানা আদায়কালে অনেক সময় হামলার শিকার হতে হয়। আর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় হামলাকরীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায় না। ২০০৭ সালের ২৯ অক্টোম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার রহিত করে। তাতে রেলওয়েতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ফলে বিনা টিকিটের যাত্রীদের উৎপাত বাড়ছেই। রেলওয়ে কর্মকর্তারা তাদের ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার’ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান জানান, রেলে অভিযানকালে শত শত বিনা টিকিটের যাত্রীকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু লোকবলের অভাবে ৮০ শতাংশই পার পেয়ে যায়। ওসব ঠেকাতেই বিশেষ প’স ডিভাইস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই বিষয়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ডিভাইস কেনা হয়েছে। প’স ডিভাইসগুলো কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংযুক্ত থাকবে।
অন্যদিকে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, রেলওয়েতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকা জরুরি। প্রথম পর্যায়ে প’স ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে, যথাযথভাবে সব কাজ সম্পন্ন করা গেলে তা সর্বত্র চালু করা হবে।
এফএন/এমআর