ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার বলেছিল, রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। অথচ রমজানের শুরুতেই বাজার অস্থির। বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই। তাদের নজর লুটপাটে।
বুধবার (৮ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, বাজারদরের মতোই সরকারের ভেতর চলছে অস্থিরতা। সরকারের সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে পিষ্ট জনগণ। গণতন্ত্রহীনতা ও দারিদ্র্যের কারণে প্রান্তিক মানুষগুলোর অধিকার বৃদ্ধির সুযোগ ক্রমাগত নিঃশেষিত হচ্ছে।
রিজভী আরো বলেন, এই রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ। এই মাস শিক্ষা দেয় সংযম-সৌহার্দ্য-সহনশীলতা-সহমর্মিতা। কিন্তু বাস্তবে সরকারের লোকজনের মধ্যে তার কোনো প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিএনপির এই নেতা বলেন, সিয়াম সাধনার এই মাসে মানুষের চরম কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবে মিডনাইট নির্বাচনের সরকারের যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। উদাসীন ভ্রুক্ষেপহীন তারা। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা। মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ রমজানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। অথচ রমজানের শুরুতেই বাজার অস্থির। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না ঘোষণার পরদিন থেকেই হু-হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে তিন থেকে চার গুণ। অন্যদিকে বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না করে প্রমাণ করেছে, নাগরিক সেবায় তারা ব্যর্থ। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, রোজার মাসের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন গরু ও খাসির গোস্তের দাম কেজিপ্রতি যথাক্রমে ৫২৫ ও ৭৫০ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গরুর গোস্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ এবং খাসির গোস্ত ৮০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারি লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ যাচ্ছে সরকারের ওপর মহলে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায় নেই। তারা জিম্মি অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে। বাজারের দুষ্টচক্র সিন্ডিকেট এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কারণ বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র ধরাছোঁয়ার বাইরে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ শেষে এখন ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের অধিকার কেড়ে নিতে তৎপর তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারি দলের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন রিজভী।
পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ারও দাবি জানান তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন রোয়েদাদ এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিলগুলোতে শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ সাপ্তাহের মজুরি বাকি পড়ে রয়েছে। স্টাফদের তিন মাসের বেতন বাকি। সামনে ঈদ আসছে, তাদের সন্তানদেরকে কাপড় দেওয়া দূরে থাক, তাদের পেটের আহারটুকু যোগাতে পারবে কিনা- আজকে শ্রমিকরা সন্দিহান। রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে আমি দলের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে ‘মান-অভিমান’ অভিহিত করে ‘অচিরেই’ তার অবসান হবে বলে জানান রিজভী। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, চলমান রাজনীতির দুঃসময় চলছে, এই দুঃসময়ে জোটের অন্তর্ভুক্ত অনেকের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে। সেটার নিরসন হয়ে যাবে। বিশেষ করে বড় দল বিএনপি এবং জোটের আরও যারা নেতৃবৃন্দ আছেন সবার পদক্ষেপে এগুলো থাকবে না। অচিরেই এই মান-অভিমান সেরে যাবে। সোমবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। জোট ত্যাগের কারণ ব্যাখ্যায় সেদিন তিনি বলেন, অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে (বিএনপি), ২০ দলীয় জোটের কর্মকা- শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়।
‘প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ এরপর সংসদে যাওয়াটা নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি বলে মনে করেন বিজেপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সংসদে বিএনপি যে যাবে, এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউ জানে না। এসব কারণেই আমি জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে জোটের ঐক্য সুদৃঢ় আছে মন্তব্য করে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বেলেন, আমরা ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে যে কর্মসূচি করে বিভিন্ন পর্যায়ে করে যাচ্ছি সেটা অব্যাহত থাকবে- এ ব্যাপারে আপনারা নিসন্দেহ থাকতে পারেন। সরকারের নানা ধরনের ইয়ে থাকতে পারে, খেলাধুলো থাকতে পারে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন এই দশ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের সাথে কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে মিছিল করেছেন তাদের মধ্যে ভাঙ্গন আসবে না। যত নিষ্ঠুর নির্বাচন হবে ততই ঐক্য আরও অটুট হবে, আরও মজবুত হবে, ততই সিমেন্টেড হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, মাহবুবুল হক নান্নু, খান রবিউল ইসলাম রবি ও শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর