ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা মুছতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন ব্যতিরেকে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে জনগণের দল হতে পারবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।
বুধবার (৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১০৯তম জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কারণে দুই বছর আগে দলটির এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কানাডার আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ওই সময় সেই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারে- এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিকে কানাডার আদালতও সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে। তারা ক্রমাগত সন্ত্রাসী কর্মকা- করে যাচ্ছে।
বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় তাদের শীর্ষ এক নেতা দ- নিয়ে কারাগারে, অপর নেতা দ- নিয়ে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে যুদ্ধক্ষেত্রের নির্দেশনা দিচ্ছে তারেক রহমান। ময়দানে যুদ্ধরতরা এই নির্দেশনা সঠিক নয় বলছে। আসলে যারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য জঙ্গিদের সহযোগিতা নিয়ে গ্রেনেড হামলা করে, তারা রাজনৈতিক দল হতে পারে না। এটা সন্ত্রাসী দল। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী দলের তকমা মুছতে হলে বিএনপির এই শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। আপনারা নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে সন্ত্রাসী দলের তকমা মুছতে পারেন।
বিএনপি জোট থেকে বিজেপির বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, যাদের মধ্যে কোনো চেতনা নেই, আদর্শ নেই সেই দল বেশি দিন টিকতে পারে না। তারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে, দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় না থাকায় দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে দল ছাড়তে শুরু করেছে। তাদের বিশ দলীয় জোট থেকে ইতিমধ্যেই কয়েকটি দল পালাতে শুরু করেছে। বিএনপির হতাশ নেতাকর্মীরাও দল ছাড়তে শুরু করেছে। দলের জন্মটা ভালো না হলেও অনেকে মনে করেছিল ভালো নেতৃত্বের মাধ্যমে ভালো কিছু পাওয়া যাবে।
এসময় প্রীতিলতার কথা স্মরণ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যখন মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতো না, সেই সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী দলে যোগ দেন এবং দেশের মুক্তির জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন। আজকে রাজনীতিতে আদর্শের বড় অভাব। তাই প্রীতিলতার জীবনীগ্রন্থ আমাদের বেশি বেশি পড়তে হবে। রাজনীতি যে একটা মহান আদর্শ, সেই আদর্শের জন্য প্রয়োজনে দেশের তরে জীবনও বিসর্জন দিতে হয়, প্রীতিলতা আমাদের সেই শিক্ষাই দেন। জিয়াউর রহমানের কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদদের কেনবেচা শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বিএনপি নেতাদের অতীত দেখলেই বোঝা যায়। তারা বিভিন্ন দলে ছিলেন। তারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য। বিএনপি এবং তার নেতাদেরও কোনো আদর্শ নেই। বর্তমান বিএনপির জনবিচ্ছিন্নতার এটি একটি অন্যতম কারণ।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপির জন্মটা সঠিক না হলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা টিকে থাকুক, এটা আমরাও চাই। বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে, বিএনপিকে সন্ত্রাসী দলের তকমা থেকে বের হতে হলে, নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে হবে বলে আমি মনে করি।
আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ। পরিচালনা করেন শেখ নওসের আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এমএ করিম প্রমুখ।
এফএন/এমআর