এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি নেই

প্রথম পাতা » জাতীয় » এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি নেই
সোমবার ● ৬ মে ২০১৯


এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি নেই

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছর শেষ হতে চললেও রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি নেই। এনবিআরে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চে ২ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকার রাজস্ব। অর্থাৎ ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে ৫০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ৯ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থবছরের বাদবাকি সময়েও আদায়ে বড় উল্লম্ফন না হলে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ে বিশাল ব্যবধানের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এনবিআর। তার আগে সর্বশেষ ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থবছরের বাদবাকি সময়ে রাজস্ব আদায়ে বড় উল্লম্ফন না হলে বিগত ১৯ বছরে এবারই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজস্ব আদায় কাক্সিক্ষত হারে না বাড়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় চিন্তিত। রাজস্ব আদায়ে এতো কম প্রবৃদ্ধিতে সম্প্রতি এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। গত অর্থবছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। অথচ ৯ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। তবে অর্থনীতিবিদরা এ ধরনের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাকে বাস্তবতা বিবর্জিত আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আদায়ের সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার এতো ব্যবধান ক্রমাগত চলতে থাকলে সরকারের রাজস্ব নীতির উপর মানুষ আস্থা হারাবে। যেখানে অতীতে আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ১৪ শতাংশ, সেখানে ৪০ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবতা বর্জিত। এতো বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তাছাড়া গতবছরের একই সময়ে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এবার তা মাত্র ৬ সাত শতাংশ। এর পেছনে কী কারণ তা খাতিয়ে দেখা উচিত।
বিগত কয়েক বছর ধরে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে তার ফল দেখা যাচ্ছে না। যদিও গত কয়েক বছর ধরেই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নেয়ার পর অর্থবছরের শেষ দিকে তাতে সংশোধন করে কমিয়ে আনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এবারো অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সভায় লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যে হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত সোয়া দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ৯ মাসে শুল্ক আদায় বেড়েছে মাত্র ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এ সময়ে ৬২ হাজার ৮২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে মাত্র ৪৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। তাছাড়া গত ৯ মাসে ৭৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৬০ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। তবে আয়কর আদায়ে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। ৬৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, শুল্ক ও ভ্যাট আদায় অস্বাভাবিক কম হওয়ায় এনবিআরে অস্বস্তিতে রয়েছে। কারণ স্বল্প শুল্কের ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্য বন্দরে খালাস হয়ে যাচ্ছে কি না এমন সম্প্রতি আলোচনা বেশ জোরালো হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ প্রায়ই অভিযানে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য আটক করছে। তাতে দেখা যায়, বন্দর থেকে ওসব পণ্য স্বল্প শুল্কের হিসেবে খালাস হলেও বাস্তবে সেসব পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ছিল কয়েকগুণ বেশি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াও নির্বাচনের আগে সরকার কয়েকটি খাতে করছাড় দিয়েছে। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ছাড় দেয়ায় এ খাত থেকে চলতি বছর প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য রাজস্ব কমবে। তাছাড়া ইন্টারনেট সেবায় ভ্যাট ছাড় এবং কিছু খাতে কর ছাড়ও দেয়া হয়েছে। সব ধরনের রপ্তানির উপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে দুই ধাপে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনায় প্রায় ১ হাজার ২শ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম আসবে। রাজস্বে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫১:০৭ ● ৩১০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ