ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বড় হারের পর সংসদে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নেতারা নিয়েছিলেন, তা ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির নির্বাচিত ছয় জনের মধ্যে পাঁচজন এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দলের ভেতরে নানামুখী প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে ফখরুলের এই স্বীকারোক্তি এল।
রবিবার (৫ মে) এক অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, আমরা অতীতে যে বলেছিলাম যে আমরা (সংসদে) যাব না, সেই সিদ্ধান্তটা আমাদের ওই মুহূর্তে সঠিক ছিল না- এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তোলার পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। জোটভুক্ত দল গণফোরামের দুজন শপথ নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ করেছিল দলটি। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ দলের ওই সিদ্ধান্ত না মেনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। কিন্তু ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্পিকারের কাছে শপথ নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। জাহিদুর রহমান জাহিদও ছিলেন তাদের সঙ্গে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত ফখরুলই কেবল সংসদের বাইরে থেকে যান। সে সময় তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। আর দলীয় সিদ্ধান্তেই তিনি শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এটা তাদের ‘কৌশলেরই অংশ’।
নিজে শপথ না নিলেও এ বিষয়ে নিজের উপলব্ধির কথা তুলে ধরে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, শুধু সস্তা স্লোগান দিয়ে কথা বললে চলবে না। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) মহোদয়। এ কারণেই যে, আমাদেরকে দুই দিকেই লড়াইটা করতে হবে। ওই ভেতরের থেকেও কথা বলতে হবে, বাইরে থেকেও কথা বলতে হবে। বিএনপি ‘ঐক্যবদ্ধ’ আছে এবং দলে কোনো ‘সমস্যা নাই’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এই কঠিন-সংকটময় মুহূর্তে আমাদের কমিটমেন্ট রাখতে হবে। বিপদ সামনে নিয়েও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কখনো নিরাশ হবেন না, হতাশ হবেন না। বুক বেঁধে সোজা হয়ে দাঁড়ান। নেভার গিভ আপ। দলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা দলীয় ফোরামের বাইরে না বলার জন্য নেতাদের প্রতি অনুরোধ রাখেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের লড়াইটা করতে হবে সব জায়গা থেকে। সংগ্রাম করতে হবে। পথ বের করে নিতে হবে। ভেতরেও কথা বলতে হবে, বাইরেও বলতে হবে। শুধু নেগেটিভ চিন্তা করলে এগোনো যাবে না। পজিটিভ চিন্তাও করতে হবে। এই সরকার শুধু গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করেনি, সবদিক থেকে দেশেরও ক্ষতি করেছে দাবি করে ফখরুল বলেন, আজ অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। যতই বলুক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, অর্থনীতির ভীষণ উন্নয়ন হয়েছে, অর্থনীতি একেবারে গম গম করছে। কিন্তু অর্থনীতি অত্যন্ত ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। কয়েকদিন আগে সিপিডিও একথা বলেছে।
বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে দেওয়া হচ্ছে। জামিন পাওয়ার যোগ্য হলেও ভয়ে তাকে জামিন দিচ্ছে না। কারণ সরকার জানে দেশনেত্রী বেরিয়ে এলে হ্যামিলনের বাঁশির মতো মানুষ বেরিয়ে আসবে। তিনি এতোই অসুস্থ, তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। আমি বলতে চাই কারাগারে খালেদা জিয়ার যদি কিছু ঘটে তাহলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু দলের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। সেজন্য তাকে টার্গেট করে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। পিন্টু ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব প্রিয় ছিল। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে জেলখানায় তার নামে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করাই তার জন্য কাল হলো।
সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মিলিত ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম নাহিদ। অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা শাহিন শওকত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, শফিকুল ইসলাম মিল্টন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এফএন/এমআর