ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল করিব রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাস্তায় নামতে হবে। সরকার যদি তাকে মুক্তি না দেয় তাহলে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে তিনি একথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল আয়োজিত এ অনশন সকাল ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে।
প্রতীকী অনশনে একাত্মতা জানিয়ে রিজভী বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। কারণ তিনি অসুস্থ। তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই সরকারকে বলবো, সুস্থ্যভাবে বাঁচার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অন্যথায় গণআন্দোলনের মুখে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবেন।
‘বিএনপি দুর্গতদের নিয়ে রাজনীতি করছে’ বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাব দেন রিজভী। ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার আগে উপকুলীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুর্গতদের জন্য সরকার খাবারের ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে আসার আগে গত শুক্রবার বিকাল নাগাদ ১৬ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল; ঝড় কেটে গেলে গতকাল শনিবার বিকালে তাদের ঘরে ফিরতে বলা হয়।
রিজভী বলেন, উপকূলীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরকার কোনো খাবারের ব্যবস্থা করেনি এবং সেখানে যে রান্না করে খাবে সেটিরও কোনো জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষজনকে ওই ছোট্ট জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই যে সাইক্লোন সেন্টার সেখানে এত মানুষের নিজে রান্না করে খাবারের ব্যবস্থা নেই। এরজন্য সরকারেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা।
বিএনপির সমালোচনার জবাবে রিজভী বলেন, বিরোধী দল তো কথা বলবেই, বিরোধী দল তো প্রতিবাদ করবেই, দাবি জানাবেই। আপনারা সরকার ধরে রেখেছেন, আপনারা ক্ষমতা আগলিয়ে রেখেছেন, আপনাদের দায়িত্ব এই দুর্গত মানুষদের আশ্রয় দেওয়া, তাদেরকে খাবার দেওয়া, তাদের প্রাণে বাঁচানো। কয়েকদিন ধরে আমরা বলছি, ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। সরকার তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদেরও বলেছি, উপদ্রুত মানুষদের সাহায্যের জন্য, সহায়তার জন্য। উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ে ১৫ জনের মৃত্যুর খবরও দেন রিজভী, সরকারি হিসেবে যে সংখ্যা ৪।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিও করেন রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান, তাকে আটকিয়ে রেখে নির্বাচন করবেন। উনাকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে, গণতন্ত্র জাহান্নামে যাক, সুষ্ঠু নির্বাচন চুলায় যাক- তাতে তার কিছু যায় আসে না। তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতায় থাকার জন্য এই সরকার সব ধবংস করে দিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি তো বলি, সব তো পেলেন, গণতন্ত্রকে মাটি চাপা দিয়ে সব কিছু পেলেন, এবার দেশনেত্রীকে সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য মুক্তি দিন। কারাগারের একজনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দুই তিন-দিন আগে একটি ঘটনা ঘটেছে, এটা কোনো গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়নি। কারাগারের মধ্যে অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়কে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা। আমরা যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করি, তাকে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে।
সংশয় প্রকাশ কী সাধে? কারণ কারগারের মধ্যে যে বন্দি তার নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সেই দায়িত্ব এই সরকার পালন করেনি। বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে (সাবেক সাংসদ) কারাগারে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন রিজভী। তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনশনে বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক বাহা উদ্দিন বাহার, মৎস্যজীবী দলের নাদিম চৌধুরীসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এফএন/এমআর