ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দলীয়করণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শনিবার (৪ মে) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে আধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যাচ্ছে, সরকারি আধিপত্য, সরকারি নির্দেশনামা এবং শিক্ষা, মেধা ও গবেষণার চেয়ে সরকারদলীয় আনুগত্যটাই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার ফলে শিক্ষকতার মান, শিক্ষার্থীদের সুযোগ, গবেষণা সবকিছুই একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চায় সরকারদলীয়রা। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই তারা ছাত্র সংগঠন, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারদলীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাপটে নির্বাচন কেন্দ্রিক এবং অবকাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁদের মূল কাজ না করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরকারদলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ইউজিসির চলমান কৌশলপত্রের বিপরীতে পাল্টা কৌশলপত্র প্রণয়ন করবে বলেও জানানো হয়।
বিগত ১১-১২ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই: উচ্চশিক্ষা, নীতিমালা, কাঠামো’ শীর্ষক কনভেনশনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সামিনা লুৎফা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক মানের অবনমন ঘটেছে বলে একটি ধারণা ধীরে ধীরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতি শিক্ষাগতমানের উপরে প্রভুত্ব করছে। অল্প কয়েকটি বাদ দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল সনদ বিক্রির ভবনে পরিণত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালযগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কনভেনশনের আয়োজন করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারি কর্তৃত্ব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কৌশলপত্রের কারণে সান্ধ্যকোর্স, বৈকালিক কোর্স, বিশেষ প্রোগাম চালু; স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার, শিক্ষায় জিডিপির তুলনায় কম বরাদ্দ ও গবেষণায় তহবিল বরাদ্দ না থাকা; অ-স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, শিক্ষক নিয়োগে দলীয় বিবেচনায় ভোটার বৃদ্ধির প্রবণতা, ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফামুখী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কারণে মান অর্জনে ব্যর্থসহ সমস্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসব সঙ্কট সমাধানে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। এ ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্র কর্তৃক সমাধান, ইউসিজির কৌশলপত্রে পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আইনের সংস্কার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যদূরীকরণ, পাঠদান ও গবেষণায় জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, ভর্তি ও নিয়োগে পরিবর্তনের কথা বলেন। অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, দলগত ও আঞ্চলিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে পাস করা শিক্ষার্থীদের ওই বিভাগে চাকরি দেবার প্রবণতা বদলাতে হবে। এ সময় তিনি ইউসিজির চলমান কৌশলপত্রের বিপরীতে পাল্টা কৌশলপত্র প্রণয়ন ও ১৯৭৩ এর আদেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, তার আলোকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ও জ্ঞানমুখী পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর