ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বঙ্গোসাগরের নিম্নচাপটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীতে পরিণত হয়ে ভারতের ওড়িশায় তা-ব চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পর দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এটি বৃষ্টি ঝরিয়ে আরও দুর্বল হতে হতে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যায়। লঘুচাপে পরিণত হওয়ার পর এটি বিলীন হয়ে যাবে। এই ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতে ১০ জন এবং বাংলাদেশে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে। অসংখ্য ঘর উড়ে গেছে ঝড়ে, উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা।
অতি প্রবল হয়ে ওঠা ফণী দুর্বল হয়ে শনিবার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশে ঢোকায় ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে যাওয়ার কথা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল। তবে ঝড়ের প্রভাবে সারা বাংলাদেশে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। রোববার পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস। সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ায় বিপদ সঙ্কেত নামিয়ে ফেলতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা কয়েক লাখ মানুষকে বলা হয়েছে ঘরে ফিরতে।
শনিবার দুপুর থেকে মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়। তবে ঝড়ের কারণে বায়ুচাপের তারতম্য এবং অমাবস্যা সমাগত বলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুই থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ফণী স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে দুপুর ১২টায় পাবনা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ অঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, অমাবস্যা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা ২-৪ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উৎপত্তি ও গতিপথ: ভারত মহাসাগরে সুমাত্রার পশ্চিমে বিষুবরেখার কাছাকাছি এলাকায় লঘুচাপ ২৬ এপ্রিল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর তা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে হতে দুই দিনের মাথায় পরিণত হয় মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে। এর নাম আগেই ঠিক করে রাখা ছিল ফণী, যা ছিল বাংলাদেশের প্রস্তাব। অস্থির গতিপথ ধরে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে ২৯ এপ্রিল পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর পরদিনই ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা একে চিহ্নিত করেন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।
১৯৯৯ সালে ওড়িশার পারাদ্বীপে আঘাত হানা সুপার সাইক্লোনের পর ফণীই শক্তিমত্তার দিক থেকে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সবচেয়ে বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড় ছিল। ১০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল ওই ঝড়। তাই এবার ফণী আঘাত হানার আগে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোয় ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল ভারত ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ১৬ লাখ এবং ভারতে তারও বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সকালে ওড়িশার তীর্থ নগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূলে আঘাত হানে ফণী। ওই সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড় ফণীর ‘চোখ (কেন্দ্র)’ পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসতে সময় লাগে পুরো দুই ঘণ্টা।
এফএন/এমআর