ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের পথে সকল বাধা দূর করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য মিয়ানমারে প্রস্তুতি শুরু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সচিব মাহবুব উজ জামান; মিয়ারমারের হয়ে সভায় ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যাচাই প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে বৈঠকে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা যাদে নিরাপদে, আত্মমর্যাদা নিয়ে তাদের নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারে, নিশ্চিন্তে বসবাস করার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বৈঠকে বাস্তবসম্মত আলোচনা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেলার এবং নিরাপদে বসবাসের সুযোগ যেন তৈরি করা হয়, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের তরফ থেকে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে ফেরার পর সকল মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, তাদের নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথে আইনগত ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার কথা বলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী হয়।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়। মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের নাগরিকদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে আছে, যাচাই বাছাই করে তাদের ফিরিয়ে নিতে তারা তৈরি আছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের ফেরার মত অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর রোহিঙ্গারা বলছে, নিরাপত্তার পাশাপাশি নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল তারা ফিরে যাওয়ার কথা ভাববে।
প্রথম ধাপের দুই হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে শিগগিরই আলোচনায় বসার একটি প্রস্তাব শুক্রবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। মিয়ানমার তাতে সম্মতি দিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের আরও বেশি সম্পৃক্ততা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দলের কক্সবাজার সফরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসিয়ানসহ আগ্রহী আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করার ওপরও বৈঠকে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।
এফএন/এমআর