ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় নেই বললেই চলে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছওে রেলে শুধুমাত্র ৭১ টন খাদ্যশস্য ও প্রায় ৩ টন চা ছাড়া আর কোনো কৃষিপণ্যই পরিবহন করা হয়নি। অথচ ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য পরিবহনে অন্যতম প্রধান বাহন ছিল রেলপথ। ওই সময় কাঁচা পাট, তুলা, ডাল, মসলা, তেলবীজ, গম, অন্যান্য খাদ্যশস্য, লবণ, চিনি, আখ, চা, উদ্ভিজ্জ তেলসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ট্রেনে পরিবহন করা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে কৃষিপণ্যবাহী বিশেষায়িত ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের চারটি অঞ্চল থেকে যাত্রা করে ওই কৃষিপণ্যবাহী বিশেষায়িত ট্রেনগুলো ঢাকায় তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মিলবে। মূলত রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশে সহজ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই ট্রেনগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যশোর অঞ্চল থেকে ঢাকায় কৃষিজাত পণ্যের ৩৫ শতাংশের মতো আসে। একইভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আসে প্রায় ৩০ শতাংশ। সাভার-মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকে আসে আরো ৩০ শতাংশ। তার বাইরে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকেও বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য রাজধানীতে আসে। কৃষিপণ্যবাহী ট্রেনগুলো খুলনা, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহের দেয়াওনগঞ্জ থেকে কৃষিপণ্য ঢাকায় পরিবহণ করবে।
সূত্র জানায়, বিশেষায়িত ট্রেনগুলো চালুর লক্ষ্যে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। সেজন্য রেলওয়ে দরপত্রও আহ্বান করেছে। সেখানে শাকসবজি পরিবহনের জন্য থাকবে সাধারণ ভ্যান। আর মাছ, মাংস, দুধসহ হিমায়িত খাদ্য পরিবহনের জন্য থাকবে রেফ্রিজারেটেড ভ্যান। রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় লাগেজ ভ্যানগুলো কেনা হচ্ছে। ভ্যানগুলোর মধ্যে ৫০টি ব্রড গেজ ও ৭৫টি মিটার গেজ। প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। দরপত্র অনুযায়ী সরবরাহকারী/নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের ২০ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে ভ্যানগুলো বাংলাদেশ এসে পৌঁছবে। ইতিমধ্যে দরপত্র কার্যক্রম অনেকটাই এগিয়ে গেছে। স্বল্পসময়ের মধ্যেই তার চূড়ান্ত কাজ শেষ হবে। তার পরপরই নির্মাতা/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, কৃষিপণ্যবাহী নতুন ট্রেনগুলো চালুর ক্ষেত্রে খুলনা থেকে যশোর হয়ে ঢাকা আসবে একটি ট্রেন। আরেকটি ট্রেন আসবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। ওই দুটি ট্রেনকে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে আসতে হবে। তবে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি শেষ হলে একটি ট্রেন মাওয়া হয়ে সরাসরি ঢাকায় আসতে পারবে। আরেকটি ট্রেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে পরিচালনা করা হবে। চতুর্থ ট্রেনটির উৎসস্থল হবে ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জ। পরবর্তী সময়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকেও একই ধরনের ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলেওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান জানান, সারা দেশ থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য রাজধানীতে আসে। সড়কপথে ওসব পণ্য পরিবহন তুলনামূলক ব্যয়বহুল। আবার যানজটসহ বিভিন্ন কারণে এর একটা বড় অংশই অপচয়ও হয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে অল্প খরচে সহজে কৃষিপণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দিতেই রেলওয়ের এই উদ্যোগ। সেজন্য এডিবির অর্থায়নে ৫০টি ব্রড গেজ লাগেজ ভ্যান ও ৭৫টি মিটার গেজ লাগেজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এখন টেকনিক্যাল সাবকমিটির মাধ্যমে কারিগরি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন চলছে। পাশাপাশি প্রতিটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে অতিরিক্ত লাগেজ ভ্যান লাগানো হবে। যেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষিপণ্য ঢাকায় আসতে পারে। সারা দেশ থেকে আসা এসব কৃষিপণ্যের প্রধান গন্তব্য হবে তেজগাঁও রেলস্টেশন।
এফএন/এমআর