কাউখালী (পিরোজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক স্মৃতি পদক-২০১৯ পেলেন কাউখালীর সুব্রত রায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ণ পরিষদের আয়োজনে ৩০মে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর ভিআইপি সেমিনার হলে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর ৫৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুব্রত রায়কে এ সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তদেরকে একটি করে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ণ পরিষদের সভাপতি লায়ন এ্যাডভোকেট মো: রবিউল হোসেন রবি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুন, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক বড়ুয়া।
অন্যান্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জেড এ হায়দার জীবন ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে দেশে গুণীজনদের কদর করা হয়না সে দেশে গুণীজন জন্মেনা । অবিভক্ত বাংলার ত্যাগী ও মহান রাজনীতিবিদ শেরে বাংলার নামে আজ এ স্বীকৃতি
প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশে হাজারো গুনীজনের সৃষ্টি হবে। প্রদকপ্রাপ্ত গুনীজনদের মধ্যে সুব্রত রায় তাঁর অনুভূতি ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলেন, এ সম্মান আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া। যারা এ রকম একটি সুন্দর আয়োজন করেছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।
শিক্ষক সুব্রত রায় ১৯৬৭ সালে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার গন্ধর্ব গ্রামে এক মধ্যবিত্ত শিক্ষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরলোকগত পিতা সুভাষ চন্দ্র রায় ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। মাতা মুকুল রানী মিস্ত্রী সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সুব্রত রায় নিজেও একজন শিক্ষক । তিনি কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি স্বরূপকাঠী উপজেলার ইএসপি ইনষ্টিটিউশন, বাটনাতলা
থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি স্বরূপকাঠী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৮৯ সালে কাউখালী মহাবিদ্যালয় হতে ডিগ্রী পাস করেন। এরপর তিনি উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ পাস করেন। পাশাপাশি তিনি ১৯৯৫ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড ডিগ্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৬ সালে পেশাগত ক্ষেত্রে তিনি সি-ইন-এড প্রশিক্ষণও লাভ করেন।
তার স্ত্রী বীথিকা সাহা, সেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। তাঁর দু‘টি সন্তান রয়েছে । তারা অধ্যয়নরত ।
শিক্ষার মানের দিক থেকে সে তাঁর বিদ্যালয়টিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন । শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রতি বছর শতভাগ পাসের হার সহ সর্বাধিক জিপিএ-৫ ও সর্বাধিক
বৃত্তি অর্জন করে থাকে। ২০১০ সালে সমাপনী পরীক্ষায় তাঁর বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষার্থী সারা দেশের মধ্যে ৫ম স্থান অধিকার করে । পরবর্তীকালে আরও কয়েকবার তাঁর বিদ্যালয়ের ফলাফলে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব । পেশাগত পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে সংগীত বিষয়ের নির্ধারিত ১৩টি গান নিয়ে তার একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে, যা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংগীত
বিষয়ের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সদস্য সচিব এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।