অর্থ সঙ্কট ও তথ্য ঘাটতি এসডিজি বাস্তবায়নে বড় বাধা: সিপিডি

প্রথম পাতা » জাতীয় » অর্থ সঙ্কট ও তথ্য ঘাটতি এসডিজি বাস্তবায়নে বড় বাধা: সিপিডি
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০১৯


অর্থ সঙ্কট ও তথ্য ঘাটতি এসডিজি বাস্তবায়নে বড় বাধা: সিপিডি

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

 টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়নে পর্যাপ্ত অর্থ ও তথ্য সঙ্কটকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই নাগরিক সম্মেলনের অংশ নেওয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। চারবছরে বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের চার বছর পার হলেও অগ্রগতি মূল্যায়নে এখনো বড় প্রতিবন্ধকতা তথ্য ঘাটতি। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ লক্ষ্য ও সূচকেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হতাশাজনক।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এসডিজির মোট ১৭ অভীষ্টের মধ্যে প্রধান ছয়টি বাস্তবায়নে ৬৮টি লক্ষ্য ও ৯৫টি সূচক বেঁধে দেওয়া হলেও বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচকে অগ্রগতির তথ্য বাংলাদেশে নেই। শিক্ষা, শোভন কর্ম, অসমতা, জলবায়ু, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন অংশিদারিত্ব সংক্রান্ত ছয় অভীষ্টের মাত্র ৩৮টি লক্ষ্য ও ৫০টি সূচকের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এতে আরও বলা হয়, এসডিজির বড় ছয় অভীষ্টের ৫০ সূচকের মাত্র ছয়টি সঠিক পথে রয়েছে। বাকি সূচকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নকালের তুলনায় এসডিজি সময়কালে শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে শিক্ষা সমাপ্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি, স্বাক্ষতার হার বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার মতো সূচকে আরও উন্নতি করতে হবে। ফাহমিদা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থের একটা সঙ্কট রয়েছে। আরেকটা সঙ্কট হল তথ্যের অভাব। তথ্য না থাকলে আমাদের অগ্রগতি কতটুকু হচ্ছে, সেটা বিবেচনা করতে পারব না। আমি বুঝতে পারব না, আমি কোথায় আছি, আমাকে কতদূর যেতে হবে। সেই তথ্যের ঘাটতিটা পূরণ করতেই হবে। সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যের ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে। আর অর্থ সঙ্কট দূর করার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলোর জন্য অর্থ যোগান দিতে হবে। তাদের জন্য একটা বিশেষ তহবিল গঠন করে তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়া। যেসব সংগঠনের অর্থসঙ্কট রয়েছে, তারা তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ করবে। তবে এ ক্ষেত্রে জলবায়ু তহবিলের মতো যেন প্রশ্ন না উঠে সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শও রাখেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৈষম্য কমানোর আগে দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে মত দেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ। কিন্তু এ তিনটির মধ্যে যদি একটা রাখতে হয় তাহলে আমি রাখব ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’। এটাকে আমি অগ্রাধিকারে প্রথম জায়গায় স্থান দিব। স্বাস্থ্যসেবার অভাব, খাবারের অভাব, শিক্ষার অভাব সকল কিছুর মূলেই আমার মনে হয় দারিদ্র্য। দারিদ্র্য ব্যক্তিগতভাবে ও জাতিগতভাবে। এসডিজি বাস্তবায়নের বিপুল অর্থের প্রযোজনীয়তার কথা মন্ত্রী বলেন।
এমএ মান্নান বলেন, আমাদের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারেৃবিশাল অর্থের প্রয়োজন, মাথা খারাপ হয়ে যায়। যেমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করতে হবে। তবে আমাদের আস্থা আছে, আমরা পারব, যোগ করেন তিনি। অর্থায়নের পাশাপাশি তথ্য ঘাটতিও আরেকটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এসডিজি না থাকলেও বর্তমান সরকার এসডিজির লক্ষ্য ও সূচকগুলো বাস্তবায়নেই কাজ করত। আমাদের সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কোন কোন জায়গায়, কী কী কাজ করতে হবে, আমরা সেই ফিল্ডওয়ার্ক করছি।
আলোচনায় অংশ নেওয়া জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এসডিজির কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সকল খাতের সঠিক চিত্র পেতে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। তাই তথ্য ঘাটতি দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৫:১৭ ● ৩২৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ