সাক্ষীর অভাবে গতি হারাচ্ছে জঙ্গি মামলার বিচারিক কার্যক্রম

প্রথম পাতা » ঢাকা » সাক্ষীর অভাবে গতি হারাচ্ছে জঙ্গি মামলার বিচারিক কার্যক্রম
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০১৯


সাক্ষীর অভাবে গতি হারাচ্ছে জঙ্গি মামলার বিচারিক কার্যক্রম

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

নিয়মিত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মূলত জঙ্গি মামলার বিচারিক কার্যক্রম গতি হারাচ্ছে। ঢিলেঢালা সাক্ষী সুরক্ষা আইন হওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ সাক্ষীরা ভয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হচ্ছে না। সাক্ষী হিসেবে যেসব পুলিশ রয়েছে তারাও আদালতে অনুপস্থিত থাকছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। আর এভাবে জঙ্গী মামলার তদন্ত ও বিচারে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। ফলে বিচারপ্রার্থীরা অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে হতাশ হয়ে পড়ছে। আদালত এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার ও আন্তরিকতা থাকলেও মামলার তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে বিরাজ করছে ভিন্ন চিত্র। চাঞ্চল্যকর জঙ্গী হামলার মামলা তদন্তে জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেপথ্যের মদদদাতাদের অনেকেই চিহ্নিত হচ্ছে না। ফলে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ছোট ছোট স্লিপার সেলে বিভক্ত হয়ে কাজ করায় আটক জঙ্গী দেয়া তথ্যানুযায়ী অন্য জঙ্গীদের ধরা যাচ্ছে না। এমনকি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাছাড়া তদন্ত শেষে যেসব মামলায় আদালতে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হচ্ছে, সেসব মামলার বিচারেও তেমন অগ্রগতি নেই। ইতিমধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার জঙ্গী গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে দু’শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। আর আইনজীবীদের মাধ্যমে গড় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছে এমন শতাধিক জঙ্গী জামিন নিয়ে আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না। দেশে আটক ও কারাবন্দী ওসব জঙ্গীর অবস্থা জানতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সূত্র জানায়, আদালতে বিচারাধীন ও পুলিশের তদন্তাধীন জঙ্গী মামলা রয়েছে ৮শ’। তার মধ্যে আদালতে বিচারাধীন মামলা ৫৫০টি। আর পুলিশের তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা আড়াইশ’। ওসব মামলায় জঙ্গীরা গ্রেফতার হলেও আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। তারা আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না। মূলত তদন্তে গাফিলতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জঙ্গীরা জামিন নিয়ে পলাতক হলেও আসামির জামিনদারদের জবাবদিহিতার অভাব থাকায় তাদের কারোর বিরুদ্ধেই আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জঙ্গীরা নির্বিঘেœ জামিন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আর গা-ঢাকা দেয়া জঙ্গীদের মধ্যে অন্তত দুই ডজন ভয়ঙ্কর জঙ্গী, যারা সমরাস্ত্র পরিচালনাসহ শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। সম্প্রতি দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে জঙ্গী সংগঠনের উত্থানের নেপথ্যে ওসব দুর্ধর্ষ জঙ্গী কলকাঠি নাড়ছে। আবার কেউ কেউ কারাগারে আটক থেকেও জঙ্গী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। তবে জামিন নিয়ে পলাতক জঙ্গীদের অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুকের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। মামলায় পলাতক জেএমবি সদস্য আরিফ পরে গ্রেফতার হলে ’১৬ সালের ১৬ অক্টোবর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০০৫ সালে ঝালকাঠিতে বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাছাড়া ’১৭ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতার গুরু ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান, সদস্য শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়। ১৪ বছর আগে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, জামিনে মুক্ত জঙ্গীরা কোথায় আছে সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। ওই বিষয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। পলাতক জঙ্গীকে দ্রুত গ্রেফতার করা না গেলে দেশে নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। ওসব ঘটনায় জড়িত জঙ্গীদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার রায় হয়েছে। শাস্তিও হয়েছে অনেক জঙ্গীর। তাদের মধ্যে অন্তত এক ডজন জঙ্গীর ফাঁসি হয়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৬:১০ ● ৩৮৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ