ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে রাজশাহীতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রোববার ইস্টার সানডের দিনে শ্রীলঙ্কার রাজধানীর কয়েকচি চার্ট ও হোটেলে একযোগে বোমা হামলার প্রসঙ্গ তোলেন। ওই হামলায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে। আহত হয়েছেন জায়ানের বাবা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। মাত্র কয়েকদিন আগেই শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটল সেখানেও আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য অনেকগুলো শিশু সেখানে মারা যায়। সেখানে আমাদেরও বাংলাদেশের শিশু জায়ানকে আমাদের হারাতে হয়েছে এই জঙ্গি সন্ত্রাসের কারণে, এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে। বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এই ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে, কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে সাথে লিপ্ত সেটা শুধু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা না, দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেলের নতুন নতুন বগি কিনেছি সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাস কিনেছি, সেগুলো পুড়িয়েছে। তাছাড়া প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ এমন কিছু নেই যা অগ্নি সন্ত্রাসের কবলে ধ্বংস হয়নি। সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন। ছোট শিশু, নারী, পুরুষ। বাবা দেখেছে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে, স্ত্রী দেখেছে চোখের সামনে স্বামী পুড়ে যাচ্ছে, মা দেখেছে সন্তান বা কন্যা পুড়ে যাচ্ছে- এইরকম ভয়াবহ চিত্র আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আমরা চাই না এ জাতীয় ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানান। এছাড়াও অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সব ধর্মের শিক্ষা গুরুদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ধর্মের নামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জানি না যারা এ ধরনের হত্যাকা- চালায় তারা কি পায়, কি লাভ তাদের হয়। মানুষের ঘৃণা ছাড়া, অভিশাপ ছাড়া আর কিছু তারা পায় না। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে যারা সন্ত্রাস চালায়, জঙ্গিবাদ চালায় তাদের কথাও বলবো। তারা এই পবিত্র ধর্মটাকে কুলষিত করছে, পবিত্র ধর্মের বদনাম করছে বিশ্বব্যাপী। তারা ইসলামের কোনো ভালো কাজ করছে না। তারা আসলে ইসলাম ধর্মটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রচ- ক্ষতি করে দিচ্ছে। যে ধর্ম সবচেয়ে মানবতার ধর্ম, যে ধর্ম সবচেয়ে শান্তির ধর্ম, সেই ধর্মের নামে তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে। এ ধরনের কাজে যারা জড়িত তাদের বিরত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই কারণে আমি সব অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশের জনগণ ও মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষাগুরু অন্য ধর্মাবলম্বি যারা যার যার আওতায় শিশু-কিশোর-যুবক যারা আছে বা ছাত্র যারা আছে, শিক্ষক যারা আছে- যদি কারো মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখা দেয় সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শুক্রবার জুমার সালাতের খুতবায় কোরআন-হাদিসের আলোকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা রাখতে ইমামদের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া করার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আগামি শুক্রবার আমি চাই প্রত্যেক মসজিদে জায়ান চৌধুরী, গত কয়েকদিন আগে নিউজিল্যান্ডে মসজিদের ভেতর ঢুকে আমাদের অনেক মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে থাকা আমাদের বাংলাদেশি, শ্রীলঙ্কার ঘটনানহ পর পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রত্যেকটা মসজিদের যেন তাদের জন্য দোয়া কামনা করা হয়। দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যারা মসজিদে নামাজ পড়াবেন আমাদের ইমাম যারা আছেন- তাদের আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা দয়া করে কথাগুলো বলবেন- এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এটা যে মানবতার বিরুদ্ধে, এর সঙ্গে কোনো ধর্মের সংযোগ নেই। জঙ্গিবাদে যারা সম্পৃক্ত হয় তারা জঙ্গি, তাদের ধর্ম নেই, দেশ নেই, কোনো কিছু নেই। জঙ্গিবাদ যে ইসলাম ধর্মের জন্য ক্ষতিকারক, ইসলাম ও আমাদের নবী করিম (সা.) তিনি সব সময় শান্তির কথা বলে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিচারের দায়িত্ব কখনো মানুষকে দেননি। সেই দায়িত্ব কিন্তু আল্লাহর হাতে। আমরা যারা কোরআন শরিফ পড়ি সেখানে আমরা পাই- যে বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তাহলে ধর্মের নামে মানুষ খুন করা কেন? যারা বিপথে চলে গেছে তারা যেন এর থেকে বিরত হয়। সারা বাংলাদেশে প্রত্যেক মসজিদে জুমায় যে খুতবা হয়, নিশ্চয়ই সেখানে আপনারা কথা বলে ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, এ কথাটা ভালোভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। রেলের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক চালু করতে চাই। রাজধানীর সাথে যোগাযোগটা আরও উন্নত করে দিতে চাই। বনলতা এক্সপ্রেস উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ইনস্টিটিউট ও স্থাপনার উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
এফএন/এমআর