দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিলেন বিএনপির এমপি জাহিদ

প্রথম পাতা » রাজনীতি » দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিলেন বিএনপির এমপি জাহিদ
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০১৯


দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিলেন বিএনপির এমপি জাহিদ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দলের শীর্ষ নেতাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে একাদশ সংসদে বিএনপির প্রথম সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনে তার দপ্তরে জাহিদুর রহমানকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী ৩০০ প্রার্থীর মধ্যে জাহিদকে নিয়ে মোট ২৯৫ জন এ পর্যন্ত শপথ নিয়েছেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত আর পাঁচজন এখনও শপথ নেওয়ার বাকি। গত ২৯ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির মধ্যেও ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন ধানের শীষের প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদ। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আওয়ামী লীগ নেতা ইমদাদুল হককে তিনি হারিয়ে দেন চার হাজার ভোটের ব্যবধানে।
শপথ নেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিয়েছি। দল আমাকে বহিষ্কার করতে পারে জেনেও আমি শপথ নিয়েছি। দল বহিষ্কার করলেও আমি দলে আছি। জাহিদ জানান, এর আগেও তিনি তিনবার নির্বাচন করেছেন। চতুর্থবারে এসে নির্বাচিত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে এর আগে কখনও বিএনপি জয় পায়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বেঁধে- জাতীয় ঐক্রফ্রন্ট গড়ে। কেন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ভরাডুবি হয়। বিগত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পায় বিএনপি। গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন। নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে তারা। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ায় বিএনপির নির্বাচিতরাও একই পথে হাঁটতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ১৯ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে সংসদে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের (তারেক রহমান) সঙ্গে বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের স্থায়ী কমিটি নিয়েছে। সুতরাং এখান থেকে ফিরে যাওয়ার বা কেনো পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। তবে নির্বাচনে বিজয়ী সবাই যে ওই সিদ্ধান্ত নাও মানতে পারেন, সে ইঙ্গিত সেদিন পাওয়া গিয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কথায়। তিনি বলেছিলেন, আমরা শুনি, নির্বাচিতরা বলেন, জনগণের ইচ্ছ। কিন্তু তাদের মধ্যে শুনলাম না এই কথা যে অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিতে আমরা পার্লামেন্টে যাব না। উঁকি-ঝুঁকি মারছে নানা চোরাগলি পথ দিয়ে নানা কথা। কোন কথা সত্য কোন কথা মিথ্যা জানি না।
কেরানীগঞ্জ থেকে ভোট করে পরাজিত গয়েশ্বর এর ২১ এপ্রিল আরেক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিএনপি থেকে নির্বাচিত কেউ সংসদের আশপাশ দিয়ে হাঁটলেও জাঁতি তাদের ক্ষমা করবে না। তবে সেই হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়ে সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের পথেই হাঁটলেন ভোটে জয়ী জাহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তাকে নির্বাচিত করেছে জনগণ। ‘তাদের প্রত্যাশা মেটাতেই’ তিনি শপথ নিয়েছেন। দল বহিষ্কার করলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ বলেন, সেই ছাত্র জীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হব না। আমি আছি।
সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবারই শপথ নিতে চান এমন চিঠি নিয়ে প্রথম সংসদে আসেন জাহিদুর রহমান। এর আগে তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়নি। বেলা ১১টার আগে সংসদে এসে স্পিকারের দপ্তরে বসেন জাহিদুর। ১২টায় তাকে শপথ পড়ান স্পিকার। শপথ নিয়ে নিয়মমাফিক সংসদ সচিবের কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর বইতে সই করেন। পরে সংসদের নিচতলায় সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচয়পত্র নেন। সেখান থেকে বেরিয়ে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনকে তিনি সাক্ষাৎকারও দেন। সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম এবং আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:৩০ ● ৩৮৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ