অর্ধডজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » অর্ধডজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০১৯


অর্ধডজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দক্ষ জনশক্তি গড়তে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি সরকার কারিগরি শিক্ষায় জোর দিচ্ছে। ওই লক্ষ্যে দেশের ৬ জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বস্ত্র অধিদফতর ওই ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ওই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট হলো, মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জামালপুরের মাদরগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিউট, বরিশালের গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বেগম আমিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। বিগত ১৮ মার্চ ওই প্রকল্পগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বস্ত্র অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও ওই বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে এদেশে কারিগরি শিক্ষার সমস্যার মূলে রয়েছে শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতির (টুলস) অভাব। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় যেসব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে, সেগুলোর ভবন তৈরির সঙ্গে সঙ্গে আনুষাঙ্গিক সব সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মাদারীপুরের শিবচরে হতে যাওয়া শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের জন্য চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের ৮ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রাক্কলনে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭২ কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘাটতি ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সংস্থান করতে ডিপিপি সংশোধনের কাজ চলছে। দ্রুতই সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য বস্ত্রও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান পাওয়া গেছে। সয়েল টেস্টও হয়েছে। শিগগিরই পূর্ত ও নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আর জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে হতে যাওয়া শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের জন্য চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। অনুমোদিত ডিপিপি সংস্থান অনুযায়ী ওই প্রকল্পের জন্য ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে জামালপুরের গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পূর্ত বিভাগের কাজ চলছে। প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও স্পিনিং শেডের নক্সা গণপূর্ত বিভাগে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান ও অন্যান্য স্থাপত্য নক্সা পর্যায়ক্রমে স্থাপত্য অধিদফতরে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চারপাশের বাউন্ডারি ওয়ালের মধ্যে তিন পাশের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া বরিশালের গৌরনদীতে হচ্ছে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছওে ওই প্রকল্পের অনুকূলে ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। অচিরেই অবকাঠামোগুলো নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলের ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ এবং ছাত্র হোস্টেলের ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ। এখন গাঁথুনির কাজ চলছে। অধ্যক্ষের কোয়ার্টার ও সাইট ডেভলপমেন্টের দরপত্র তিনবার আহ্বান করা হয়েছে। কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। অবকাঠামোগুলো শিগগিরই নির্মাণ করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুরে হচ্ছে বেগম আমিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওই প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে সংস্থান দেয়া ৫ একর জমিতে অবকাঠামোগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধন করে তা অনুমোদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর চলমান স্থাপনাগুলোর নির্মাণ কাজ শিগগিরই শেষ করা হচ্ছে। ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের জন্য চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের অনুকূলে বাজেটের অপ্রতুল রয়েছে। বাজেটের ২০ কোটি টাকার মধ্যে ৪ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ইইনসি শাখাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়াল ও পাইলিং এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা তৈরির কাজ চলমান। তাছাড়া লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের জন্য চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ২ কোটি ২০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ শতাংশ। অনুমোদিত ডিপিপি’র সংস্থান অনুযায়ী ৫ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ করে তা ইইনসি শাখাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলনও পাঠানো হয়েছে। ওই অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন চলছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল সার্ভে ও সয়েল টেস্ট শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদিত হয়েছে। পূর্ত ও নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
এদিকে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জানান, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির বিকল্প নেই। সেজন্য কারিগরি শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কারিগরি শিক্ষা নিলে কাউকে বেকার বসে থাকতে হয় না। তাদের জন্য দেশে চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি দেশের বাইরেও উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে কারিগরি শিক্ষা হতে হবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার ভিত্তিতে। সেক্ষেত্রে বর্তমান চাহিদা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৮:২১ ● ৫৪১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ