আমির হোসেন, চরফ্যাশন থেকে॥
পর্যটন নগরী চরফ্যাশন পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী লঞ্চঘাট খালটি ময়লা আবর্জনা স্তুপ করে রাখায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌরসভার সাধারণ মানুষ ও পথযাত্রীরা। গন্ধের প্রতিকার না পেয়ে বাসা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন অনেক পরিবার। মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে এমন তথ্য ফুটে উঠেছে।
মাছ, মাংশ, বয়লার মুরগি, কাঁচা বাজার ও গরু জবাই’র ময়লা পালানো(রাখার)একমাত্র লঞ্চঘাট খালটি ব্যবহারিত হচ্ছে। শহরের চতুর্থ পাশ ঘেঁেষ বৃহৎ খালটিতে ১৫থেকে ২০ফুট পানি বয়ে একসময় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর সঙ্গে মিলত হত। ফলে শহরের আগুনের সূত্রপাত হলে সহজে পানি পাওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ছিল। এই খালটি ময়লা-আবর্জনা ভরাট হয়ে যাওয়া একদিকে যেমনি পানির সংকট অন্যদিকে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ্য সাধারন জনগন। পানি যাতায়াতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ময়লার দুর্গন্ধে খালটি সংলগ্ন পরিবার গুলো বসবাস করা অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। অনেকে বাসা ছেড়ে চলেও গেছে। খালটির খানন কাজ করা কথা থাকলে দীর্ঘবছর ধরে কাজ হচ্ছে না। দুর্গন্ধে পুরো এলাকা বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। গন্ধে নানা রোগে শিশুরা অক্রান্ত হচ্ছে।
কে এগুলো বন্ধ করবে? কে এদের লেগাম টেনে ধরবে? এমনকি ময়লা খালগুলো ভরাট হয়ে অবৈধ দখলদারকে কবলে চলে যাচ্ছে। ১ম শ্রেণির এ ক্লাসে পৌরসভা অথচ খালটি পারাপার এবং আশপাশ এলাকা মানুষ বসবাস করতে পারছে না। খালটি এখন মশা উৎপাদনের প্রধান উৎস তৈরি হছে। পৌরবাসী খালটির ময়লার স্তুপ অপসারণ করে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানালেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন উদ্দ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে দুর্গন্ধে পুরো শহরের পরিবেশ নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশনের সব ড্রেনের ময়লা পানি বর্ষার জলাবদ্ধতা ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য লঞ্চঘাটের এই খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। অনেকে যার যার সুবিধামতো ভরাট করে ভবন নির্মাণ করছে। শুষ্ক মৌসমে খালে পানি না থাকায় অগ্নিকান্ড সংগঠিত হলে পানির সংকট দেখা দেয়। ফায়ার সার্ভিস পানির অভাবে অগ্নিকান্ডের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুশিল সমাজ খালগুলো পয়নিস্কাশনের দাবী জানান।এই খালের সঙ্গে মিলিত ময়লা-আবর্জনা ভারাট হওয়া ওই লঞ্চ খালটিতে গরু জবাইর সকল ময়লা আবর্জনা হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য স্তুপ করে রাখায় দুর্গন্ধে বসবাস করাই দুর্বিষ হয়ে উঠেছে। পৌরসভা থেকে এটি পরিস্কারের জন্য কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। পচা-বিষাক্ত দুর্গন্ধ শহরের পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি মশার উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসাবে পরিণত হয়েছে। এতে শহরে মশার উৎপাত এতো পরিমান বেড়েছে পড়ার টেবিল, নামাযের স্থান, শোয়ার ঘরে শুধু বো বো শব্দ করে কামড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মশারি ছাড়া পড়ার টেবিল কিংবা ল্যাপটব কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পৌরসভা কোন ওয়ার্ডেই মশা নিধনের কোন প্রকার কার্যক্রম নেই।
পৌর ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো.ইউনুছ তালুকদার বলেন, কুকুর মরা দুর্গন্ধ দীর্ঘ ২সপ্তাহে মানুষ ওই সড়ক দিয়ে চলাচলা করতে পারেনি। পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গরু,মাছ, কাঁচা বাজার এবং বয়লার মুরগির সকল ময়লা-আবর্জনা এই খালটির মধ্যে স্তুপ করে রাখায় বাতাসে পুরো এলাকায় দূষিত করে ফেলছে। এমনকি খালটি ময়লাই ভরাট হয়ে গেছে।
চরফ্যাশন পৌর মেয়র শ্রী বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, মাছ বাজার নির্মাণের কাজ চলছে তাই খালটি আটকে রাখা হচ্ছে। নির্মাণ শেষ হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শুকিয়ে থাকা খালটিতে কুকুর মরা থেকে শুরু করে গরু জবাইয়ের ময়লা প্রসংঙ্গে বলেন, আমি দ্রুত এর বিহিত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব।