ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিপুল পরিমাণ কেনাকাটা তদারক করতে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অপচয়ের অভিযোগ থাকলেও এতোদিন তা দেখার কেউ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ওই খসড়া আইন নিয়ে খুব শিগগিরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অধীন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটকে (সিপিটিইউ) পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিতে (বিপিপিএ) রূপান্তর করা হচ্ছে। নতুন আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার বছরে প্রায় ৬শ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা ক্রয় করে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৫০ হাজার কোটিরও বেশি। বর্তমানে সিপিটিইউ ওসব কেনাকাটার তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। তবে নতুন আইনের অধীনে সিপিটিইউকে বিপিপিএতে রূপান্তর করা হচ্ছে। আইনের খসড়ায় কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারি তহবিল ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, অংশগ্রহণকারীদের প্রতি নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পেশাদারিত্ব সৃষ্টির জন্য এ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। সরকারি কেনাকাটায় কোথাও আইন লঙ্ঘন বা অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা দেখা গেলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে নথি তলব করতে পারবে। তাছাড়া সরকারি কেনাকাটায় কোনো আইন ও নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তা সংশোধন করে ক্রয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন বা সংশোধনের পরামর্শ ও সুপারিশ কিংবা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারবে বিপিপিএ।
সূত্র জানায়, খসড়া আইন অনুযায়ী বিপিপিএর একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, যার চেয়ারম্যান হবেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান থাকবেন, যিনি সরকারের গ্রেড-১ভুক্ত বা সচিব মর্যাদার হবেন। ওই কর্তৃপক্ষ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইনগুলোর প্রতিপালন নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করবে। তাছাড়া বিপিপিএ গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সিপিটিইউ বিলুপ্ত হবে উল্লেখ করে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সিপিটিইউর ক্ষমতা, কার্যাবলি ও যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিপিপিএর কাছে ন্যস্ত করা হবে। তাছাড়া সিপিটিইউতে কর্মরত প্রত্যেকে এ আইন কার্যকর হওয়ার দিন থেকে সরকারি চাকরির সব সুবিধাসহ বিপিপিএর কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি কেনাকাটার পরিমাণ বৃদ্ধি ও অপচয়-দুর্নীতি রোধে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য গেলবছরের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী। ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কেনাকাটায় শৃঙ্খলার স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট বিভাগ থেকে সব ধরনের কেনাকাটা করা যেতে পারে। তাতে কেনাকাটায় অনিয়ম দূর করাসহ সরকারি কেনাকাটায় দীর্ঘ সময় ব্যয়ও রোধ করা সম্ভব হবে। তার পর পরই বিপিপিএ গঠনের উদ্যোগ নেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এফএন/এমআর