বিএনপির রাজনীতিকে নিঃশেষ করা যাবে না: ফখরুল

প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিএনপির রাজনীতিকে নিঃশেষ করা যাবে না: ফখরুল
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০১৯


---

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিকে নিঃশেষ করে দিতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে শত নাগরিক কমিটির আয়োজিত ‘খালেদা জিয়া: তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ নামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ফখরুল ইসলাম। বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ করা যাবে না উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি হচ্ছে এ দেশের মানুষের রাজনীতি। তাই বিএনপির রাজনীতিকে নিঃশেষ করা যাবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। হতাশার কথা শুনতে চাই না। বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। যারা বলে নিঃশেষ হয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে আমি একমত নয়। বিএনপি প্রতিটি সংকটের মুহূর্তে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি দেশের জনগণের দল। এটা আমাদের বারবার মনে করতে হবে। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে বিএনপিকে ভেঙে ফেলার। এবারও খালেদা জিয়া একটিমাত্র কারণে কারাগারে- তা হলো বিএনপিকে নিঃশেষ, রাজনীতিকে ধ্বংস এবং তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এটি সম্ভব হবে না, কারণ এই দল ও তার রাজনীতি এ দেশের মানুষের জন্য। তাই কখনও হতাশ হবেন না। হতাশার কথা বলবেনও না। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেত্রী যেখানেই থাকুন, জেলে বা বাইরে থাকুন তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবেন। খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি এত অসুস্থ যে বলে বোঝানো যাবে না। নববর্ষের দিন আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি এখন হুইল চেয়ার ছাড়া হাটঁতেও পারেন না। বিছানা থেকে ওঠার জন্য তাকে সাহায্য নিতে হয়। তারপরও তিনি এতটুকুও মনোবল হারাননি। এই মনোবল আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে। তরুণ ও যুবকদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে। সেই মনোবল নিয়ে গণতন্ত্র ও দেশ মাতাকে মুক্ত করতে হবে আমাদের। বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তার পুরোটা হচ্ছে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড অবদান খালেদা জিয়ার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ‘খালেদা জিয়া তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ শীর্ষক বইটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও কবি আবদুল হাই শিকদার। ৮৬০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে খালেদা জিয়ার রাজনীতির সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা ও নানা চড়াই-উতরাই সংগ্রাম ও দূরদর্শিতার গল্প উঠে এসেছে। প্রকাশনা উৎসবে মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বইটির লেখক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও কবি আবদুল হাই শিকদারও উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা। তবে অনুষ্ঠানস্থলে এক হাজার টাকায় বইটি বিক্রি হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ও নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ‘বেগম খালেদা জিয়া : হার লাইফ, হার স্টোরি’ শীর্ষক বই লেখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ৭১৮ পৃষ্ঠার ওই বইতে গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে কারাবাসসহ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর জীবনের নানা ঘটনার অজানা কথা উঠে আসে। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলে নির্ভীক, সৎ ও সাহসী লোক তৈরি করতে পারেননি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার একটা ব্যর্থতা আছে যা আমি আগেও একদিন তাকে বলেছিলাম। আজকেও বলতে চাই- তা হলো তিনি তার চারপাশে নির্ভীক, সৎ, সাহসী লোক তৈরি করতে পারেননি। এই কারণে আমরা সংকট মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছি। আর সরকার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উসকানি দেওয়ার সাহস পাচ্ছে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আজকে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা বলছেন, এলাকার মানুষের চাপ আছে শপথ নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু শুনতে চেয়েছিলাম, তারা বলবেন খালেদা জিয়া আগে মুক্ত হবেন। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত হলে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করবো। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসবকে নানা আত্মসমালোচনায় পরিণত করেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি তারা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সফলতাগুলো তুলে ধরেন। কেউ কেউ দলের নেতৃত্ব থেকে বৃদ্ধদের সরিয়ে দিয়ে তরুণ নেতৃত্ব তৈরি করারও পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া দলের বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, লন্ডন থেকে আদেশ দিয়ে নয়, বিএনপির নেতাদের স্বাধীনভাবে দল চালাতে দিতে হবে। বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই আসেন না বলে মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সামনে বসেই দলের স্থায়ী কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচিতরা কেউ শপথ নেবেন না এটা তাদের জানিয়েও দেওয়া হবে। ফলে এখন থেকে ফিরে যাওয়া বা পরিবর্তনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এই বিষয়টি এখানে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা অনেকে হতাশ হয়ে যাই। বলি দেশে তো আরও কোনও রাজনীতি নেই। সরকার এ দেশে বিরোধী দল রাখতে চায় না। তারপরও আমাদের মহাসচিব প্রতিদিন কিছু না কিছু বলে জানান দেন আমরা বিরোধী দল আছি। সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচার বিএনপিকে আরও মুজবত করে দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আগামি ১০০ বছরেও বিএনপির কিছু হবে না। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমাদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সীমাহীন নির্যাতন বিএনপিকে আরো বেশি শক্তিশালী করেছে। আজকে আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে বিএনপি আগামি শত বছর রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে। আওয়ামী লীগের এই সীমাহীন অত্যাচার আর নির্যাতন বিএনপিকে আরো বেশি শক্তিশালী আর প্রতিষ্ঠিত করেছে। মওদুদ আহমদ আরো বলেন, রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তিনি আরো আগেই মুক্তি পেতেন। তার সব মামলা জামিনযোগ্য হলেও আমরা তাঁকে মুক্ত করতে পারছি না। তারপরও বলতে চাই, তিনি আমাদের মাঝে যত শিগগিরই ফিরে আসবে ততই আমাদের মঙ্গল। খালেদা জিয়ার ফিরে আসার মানেই হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা। অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এখানে বিএনপির যেসব নেতা আছেন তারা কি নিজেদের মতো করে চলতে পারছেন নাকি তাদের হাত পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষমতা দিতে হবে দল চালানোর জন্য। লন্ডন-আমেরিকা থেকে আদেশে দল চালানো যাবে না। স্থানীয় আদেশে দল চালাতে দিতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের মতো বয়স্কদের দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ৯০ এর ছাত্র নেতা ও তরুণদের দলের নেতৃত্বে এনে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কবে থেকে আন্দোলন হবে তার সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নিতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৫:৪৭ ● ৫৫৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ