সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

প্রথম পাতা » গণমাধ্যম » সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০১৯


সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ অবনমনের মধ্য দিয়ে সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের করা এই বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫০তম। ২০১৯ সালের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’ বলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকারের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। সাতটি মাপকাঠিতে বিচার করে একটি দেশের সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে তা বোঝার চেষ্টা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস।
এই সাতটি মাপকাঠি হল- সংবাদমাধ্যমে বহু মতের প্রকাশ, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ, আইনি কাঠামো, সংবাদমাধ্যমের কাজে স্বচ্ছতা, অবকাঠামো, সংবাদকর্মীদের ওপর নিপীড়ন। সবগুলো মাপকাঠির স্কোরের গড় করে তৈরি করা হয়েছে একটি দেশের গ্লোবাল স্কোর। ১০০ পয়েন্টের এই সূচকে যে দেশের স্কোর যত কম, সে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তত বেশি। এ বছরের সূচকে ১৫০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের স্কোর দেখানো হয়েছে ১০০ এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৭৪। বিগতবছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৮.৬২, আর বিশ্বে অবস্থান ছিল ১৪৬ নম্বরে। বিগত ছয় বছরের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪ থেকে ১৪৬ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। এবার তা এক ধাক্কায় চার ধাপ নেমে এল।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম, এমনকি মিয়ানমারও এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বে গণমাধ্যমের পরিস্থিতি সম্পর্কে এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদকর্মীরা সম্পূর্ণ নিরাপদে কাজ করতে পারেন- এমন দেশের সংখ্যা বিগত এক বছরে কমে গেছে। পাশাপাশি কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো গণমাধ্যমের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফ ডেলোয়ের বলেন, গোপন অথবা প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিরোধ যদি এভাবে গৃহযুদ্ধের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে থাকে, যেখানে সাংবাদিকরা পরিণত হন বলির পাঁঠায়, তাহলে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র মহা ঝুঁকির মধ্যে আছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে কঠোর পথ বেছে নিয়েছে, তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদেরও। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের ওপর রাজতৈনিক কর্মীদের হামলার ঘটনা বেড়েছে, ইন্টারনেট সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সাংবাদিকদের গ্রেফতারও হতে হয়েছে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ১০০ দিন কারাগারে থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস লিখেছে, কর্তৃপক্ষ এখন সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে, যেখানে ‘নেতিবাচক প্রচারের’ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদ-। এবারের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি।
তবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বরাবরই দাবি করে আসছেন,বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি ‘ফ্রিডম’ ভোগ করে। মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশের দিক দিয়ে এবারের প্রতিবেদনের শীর্ষ দশ দেশ হলো- নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বেলজিয়াম ও কোস্টা রিকা। এ তালিকায় তলানীতে, অর্থাৎ ১৮০ নম্বরে থাকা দেশটি তুর্কমেনিস্তান। উত্তর কোরিয়া ও চীনের অবস্থান যথাক্রমে ১৭৯ ও ১৭৭ নম্বরে। শিল্পোন্নত পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য সাত ধাপ এগিয়ে ৩৩ তম অবস্থানে উঠে এলেও যুক্তরাষ্ট্র তিন ধাপ পিছিয়ে নেমে গেছে তালিকার ৫৮তম অবস্থানে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪০:৩০ ● ৫১৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ