রেলের স্টেশন ও ট্রেনে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই

প্রথম পাতা » জাতীয় » রেলের স্টেশন ও ট্রেনে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০১৯


রেলের স্টেশন ও ট্রেনে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বাংলাদেশ রেলওয়ের কোনো স্টেশন, ট্রেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপনের কোনো নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। ফলে চরম অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার কিলোমিটার রেলপথ, ৪৬০টি স্টেশন, রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন। তাছাড়া প্রতিদিন ৩৬২টি ট্রেন চলছে। ওসব ট্রেনের গুটি কয়েকটির মধ্যে ফায়ার এক্সটিংগুইসার থাকলেও তার অধিকাংশই অকেজো। অথচ ওসব ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ যাত্রী অগ্নিঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্টেশনগুলোতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকায় সম্পূর্ণ ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু স্টেশনগুলোতে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশের প্যাসেজ নেই। এমন অবস্থায় খোদ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর কমলাপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ প্রায় সব ক’টি বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনেই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বারবার পুড়েছে স্টেশন, ট্রেন। চলন্ত ট্রেনের যাত্রীবাহী বগি-ইঞ্জিনেও ছোটখাটো অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। কারণ ১৯৫টি অতি মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন এবং শত শত মেয়াদহীন যাত্রীবাহী বগি নিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে অগ্নিকা-ের আশঙ্কাও বেশি। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং নানা কারণে রেলওয়েতে ব্যাপক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ইঞ্জিন, বগি, রেলপথ, রেলওয়ে ব্রিজসহ স্টেশন এবং রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনায় ইতিপূর্বে ব্যাপক অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। কিন্তু স্টেশন, ট্রেন ও প্রশাসনিক ভবনগুলোতে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় এবং ওসব স্থাপনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে প্রবেশ করতে না পারায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। গত কয়েক বছরের অগ্নিকা-ে কমলাপুর স্টেশন প্লাটফর্মে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন, যাত্রীবাহী বগিসহ স্টেশন ভবন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একাধিকবার সার্ভার পুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সূত্র জানায়, দেশে নতুন তৈরি করা রেল স্টেশন ও রিমডেলিং স্টেশনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণে যথাযথ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাছাড়া শুধু বড় স্টেশনগুলো নয়, ছোট স্টেশনগুলোতেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। স্টেশনগুলোর চারপাশে যথাযথ বেড়া না থাকায় ইচ্ছেমতো সাধারণ মানুষ স্টেশন হয়ে চলাচল করে। নাশকতাকারীরা যে কোনো সময় এ সুযোগটি ব্যবহার করে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। একবিংশ শতকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রেল যোগাযোগকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে রেলের সম্পদ রক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু এদেশে তা দারুণভাবে অনুপস্থিত। তাছাড়া প্রতিদিন রেলে হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে। ট্রেনে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনো তা নিশ্চিত করা যায়নি।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়েতে যে কোনো নাশকতা রোধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা জরুরি হলেও রেলওয়েতে তা নেই। প্রথমত সংস্থাটিতে লোকবলের অভাব রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ের থানাগুলোতেও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। অথচ স্টেশন, প্রশাসনিক ভবনসহ প্রতিটি ট্রেনেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্মের প্রতিটি পিলার দেয়ালে ফায়ার এক্সটিংগুইসার লাগানো দরকার। প্রতিদিন স্টেশনগুলো দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীসাধারণ চলাচল করছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
এদিকে খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়েও আগুন নেভানোর কোনো নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের প্রধান গেট ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাড়ি আসা-যাওয়ার উপযোগী করা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথে নাশকতা রোধে রেলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও কম। স্বাধীনতার পর পর বিভিন্ন স্টেশন ও স্টেশন এলাকায় ভূর্গভস্থ পানি তোলার পর যে বড় ইঁদারায় রাখা হতো তাও বহু যুগ আগে ভরাট হয়ে গেছে। কোনো স্টেশনেই আগুন নেভানোর পানি স্টোরেজ ও বালির ব্যবস্থা নেই। সব মিলিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে ট্রেন ও যাত্রীসহ স্টেশনগুলো।
অন্যদিকে রেলওয়েতে অগ্নিনির্বাপণ নিশ্চিতকরণে কী কী করণীয় রয়েছে তার জন্য রেলওয়ে যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। তাছাড়া কমলাপুরসহ রেলওয়ের বিভিন্ন স্থানে কয়েক মাস আগে যেসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তা নির্ণয় করে রিপোর্ট আকারে জমা দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমলাপুর স্টেশনসহ বড় বড় স্টেশনগুলোতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞ টিম এবং সাধারণ যাত্রীদের সমন্বয়ে উম্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে। ওখান থেকে ওঠে আসা করণীয়গুলো যত দ্রুত সম্ভব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। তাছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনসহ বিভিন্ন স্টেশন এবং ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, সামনের দিনগুলোতে কী করে রেলওয়ে স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, ট্রেন ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় সেদিকেই নজর দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেনে অভ্যন্তরীণ কোনো অল্প আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনায় রেলওয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব ফায়ার সার্ভিস আছে তা দূরত্ব ভেদে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পৌঁছতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েই যায়।
একই প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, পুরো রেলওয়েতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ রয়েছে। শুধু রেলওয়ে স্টেশন, প্রশাসনিক ভবনই নয়, যে কোনো সময় ট্রেনগুলোতেও আগুন লাগতে পারে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো রেলওয়েতে অগ্নিনির্বাপণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৮:১৩ ● ৭০০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ