সাগরকন্যা ডেস্ক॥
ভারতের অভ্যন্তরে গত চার মাস ধরে ফারাক্কা বাঁধের সংস্কারের কাজ চলার কারণে ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এতে করে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি কাজ কমে যাওয়ায় আর্থিক টানাপড়েনের শিকার হচ্ছেন বন্দরের শ্রমিক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে আগ গড়ে প্রতিদিন দুশ থেকে আড়াইশ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করতো। বর্তমানে তা কমে ৯০ থেকে ১০০ ট্রাকে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ, খৈল, চালসহ অল্প পরিমাণে কিছু পাথরবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট আজিজ সরদার ও এনামুল হকবলেন, পদ্মা সেতু রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ পাথরই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হতো। গড়ে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে শুধুমাত্র ১২০ থেকে ১৩০টি ট্রাকে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের পাথর আমদানি হতো। যা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। সেই সঙ্গে বন্দরের রাজস্ব আহরণের মূল পণ্যই ছিল পাথর। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ভারতের ভেতরে ফারাক্কা বাঁধের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে ওই দিন থেকে সেই বাঁধের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এতে করে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমদানি-রফতানি কমে আসায় বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। কাজ কমে যাওয়ায় সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। বন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, আগে বন্দর দিয়ে পাথর, পেঁয়াজ, খৈল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ২শ’ থেকে আড়াইশ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো। এর ফলে সব গ্রুপের শ্রমিকরা সারাদিনে ৮ থেকে ১০টি করে ট্রাক খালাস ও ভর্তির কাজ পেতেন। যে পরিমাণ মজুরি পেতন তাতে করে শ্রমিকদের কোনোরকমে চলে যেতো। এখন বন্দর দিয়ে গাড়ি কমে আসার কারণে কোনও কোনও দিন ১টি থেকে ২টি ট্রাক খালাস ও ভর্তির কাজ পাচ্ছেন কেউ কেউ। কোনো কোনোদিন সেটিও জুটছে না। এ কারণে বন্দরের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটে পড়েছেন। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনবলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অনেক কমে এসেছে। আগে দিনে ২৩০ থেকে ২৫০ টি পাণ্যবাহী ট্রাক আসতো এখন আসছে ১০০টিরও কম। গত ডিসেম্বর মাস থেকে ভারতের ফারাক্কা ব্রিজের সংস্কারের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হিলি স্থল শুল্কস্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনবলেন, হিলি স্থলবন্দরে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গত ৯ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৭৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এর মূল কারণ হলো আমাদের হিলি স্থলবন্দর ব্যবহারকারী যে সব আমদানিকারক ভারত থেকে যে সব পণ্য আমদানি করেন, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের সংস্কার কাজ চলার কারণে এই পথ দিয়ে বর্তমানে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। দেশের অন্য বন্দর দিয়ে পণ্যগুলি আমদানি হচ্ছে। এ কারণেই মূলত হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৫ ভাগ বেশি রয়েছে। আশা করা যায় বাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হয়ে গেলে রাজস্ব আহরণে যে ঘাটতি রয়েছে সেটি আর থাকবে না। ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।