এইচ.এম. হুমায়ুনকবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে॥
পানির অপর নাম জীবন। পানি বিহীন জীবন কল্পনা করা যায়না! তাহলে আপনরাই বলুন- চোখে দেখে এই পানি খেয়ে কি জীবন বাঁচাতে ইচ্ছে করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরে সরবরাহ করা সাপ্লাই পানি সরবরাহকৃত লাইনের পানির সঙ্গে মাঝে মধ্যে তাজা পোকা মাকড়, কেঁচোও আসছে এবং সরবরাহ করা পানি মাঝে ধধ্যে লালচে ও আঠালো দেখা যায়। রান্না করা ভাত-তরকারি লাল হয়ে যায়। অনিরাপদ পানি পান করছে ১৯৭৮২ জন মানুষ।
পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ১মার্চ ৩.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে কলাপাড়া পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৩ জুলাই ২০১৫ এটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। বর্তমানে পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার, ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী পৌরসভার জনসংখ্যা রয়েছে ১৯৭৮২ জন। পৌরবাসীর পানির চাহিদা পুরনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ডিপিএইচই ডানিডার প্রায় দুই কোটি টাকা অর্থায়নে পৌর শহরের মোজহার উদ্দিন বিশ্বাস অর্নাস কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয় ট্যাংক। এর ধারন ক্ষমতা ৫লক্ষ লিটার।
প্রতি ২৪ ঘন্টায় পৌরবাসীর পানি চাহিদা রয়েছে ১৫০০ মিটার কিউব বা ১৫ লক্ষ লিটার। কিন্তু ১টি ওভার হেড ট্যাংকে পানি উত্তোলন সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৫০০ মিটার কিউব বা ৫ লক্ষ লিটার। ট্যাংক বসানো পর অনেকে সাপ্লাই পানি সরবরাহ করা পানির রং দেখে ঘাবরে যেতো অনেক মানুষ। সাপ্লাই সরবরাহ করা পানি লালচে ও আঠালো ভাত ও তরকারি পাক করলে ভাত-তরকারি লাল হয়।এতো দিন পৌরবাসী এই পানি ব্যবহার করলেও এখন অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষ করে হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, বাসা বাড়ীতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে কিনে নিচ্ছেন (ওয়াটার ফিল্টার) শোধন যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে।
৮নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মো.বাবুল বেপারি বলেন, সাপ্লাই পানি দিয়ে পাক করা যায় না । ভাত ও তরকারি পাক করলে ভাত-তরকারি লাল হয়ে যায়। পাক করলে রং ও গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তার বাসা সামনে একটি গভীর নলকুপ রয়েছে। ওই নলকুপের পানিও লালছে।ওই পানি রান্নার কাজে ব্যহার করা যায়না। এজন্য তিনি আট হাজার টাকা ব্যয় করে একটি শোধন যন্ত্র ব্যবহার করেন। তার প্রতি মাসে ২৫০টাকা ব্যয় এর কার্বন পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
পৌর শহরে পানি সাপ্লাই ব্যবহারকারী স্থানীয়রা জানান, সাপ্লাই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর আঠালে এবং চুল বিবর্ন হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে কারো কারো শরিরে চুলকায়। বর্তমানে শহরের বহু পরিবার এবং সেই সাথে হোটেল ব্যবসায়ীরা এই পানি সরাসরি ব্যবহার করছেন না। সবাই শোধন করে নিরাপদ পানি ব্যবহার করছেন।
পৌর শহরের রেষ্টুরেন্ট গুরুদেব মিষ্ঠান্ন ভান্ডার মালিক ওবিরাম বলেন, তিনি নয় মাস আগে ৫৮হাজার টাকা ব্যয় করে একটি শোধনযন্ত্র স্থাপন করেছেন। ওয়াটার ফিল্টার শোধন যন্ত্র স্থাপন করে নিরাপদ পানি দিয়ে মিষ্টি তৈরি করেন। তিনি আরো বলেন, শোধন যন্ত্রের পানি দিয়ে মিষ্টি কোনো খাত হয়না। মিষ্টি ডালিমের রসের মতো হয়।
পৌর শহরে লঞ্চঘাঠের কালাম খাবার হোটেলের মালিক মো. কালাম হোসেন বলেন, আমি এক বছর আগে ৫৫হাজার টাকা ব্যয় করে একটি শোধনযন্ত্র স্থাপন করি। আগে সাপ্লাই পানি দিয়ে ভাত রান্না করলে ভাত লাল হয় এখন ভাত সাদা হয়। দরকারি লাল হয় । সাধ লাগেনা। আগে বাহির থেকে পানি কিনে ক্রেতাদের খাওয়াতেন। আগে পানির রং দেখে পর্যটকরা ঘাবরে যেত। তারা খাওয়ার জন্য বোতলের পানি কিনে আনত। এখন তিনি নিরাপদ পানি দিচ্ছেন। পৌরসভা থেকে সাপ্লাই পানি যদি ফিল্টার করে পানি ছাড়লে সবার জন্য উপকারি হত।
কলাপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিহাদ হোসেন বলেন, ২১টা প্যারামিটার দ্বারা পরিক্ষা করা হয়েছিল। ক্ষতির কোনো কারন নেই। ওয়াল্ট ব্যাংক পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা মহাখালীতে পরিক্ষা করা হয়েছে। পানির রং লালচে, হওয়ায় তারা প্রথমে ধারনা করে ছিলেন এতে অধিক পরিমানে আয়রন রয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষাÑনিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন। এই পানি ব্যবহারের উপযোগী। তবে উন্নত পরিক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সুইজারল্যান্ড গবেষনাগারে পাঠানো হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থার কারনে পানি লাল হচ্ছে। এখন হয়তো আয়রন আছে। দুই বছর পর আয়রন না থাকতে পারে।
কলাপাড়া পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুজ্জামান বলেন, পৌর শহরে সরবরাহ করা সাপ্লাই পানি সরবরাহকৃত লালচে ও আঠালো- ভাত ও তরকারি পাক করলে ভাত-তরকারি লাল হয়ে যায় আয়রণ বেশি -এটাই ঠিক আছে। তবে সাপ্লাই পানি পরীক্ষাÑনিরীক্ষা মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন, সাপ্লাই পানি নিরাপদ ও ব্যবহারের উপযোগী। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমার (সি টি ই আই পি) প্রজেক্ট’র সাথে কথা হয়েছে। তারা হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, বাসা বাড়ীতে(ওয়াটার ফিল্টার) শোধন যন্ত্র স্থাপন করে যেভাবে পানি আসে ওই ভাবে তারাও একটি(ওয়াটার ফিল্টার) শোধন যন্ত্র স্থাপন করবে। তাহলে এই সমস্যা জনমনের ভীতি কমে যাবে।