ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
রমজান আত্মসুদ্ধির মাস হলেও এদেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে টাকা কামানোর মাসে পরিণত হয়েছে। ওই তারা নানা কৌশলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। আর স্বল্প ও সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। কারণ রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি শুরু থেকেই অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ে নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীও জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারি কয়েকটি সংস্থাকে বাজার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশনের বাজার মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসন বাজার মনিটর করবে। ওসব সংস্থা খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি ও মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে। একই সঙ্গে বাজার নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কমমূল্যে বাজারে পণ্য বিক্রি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে। তার বাইরেও র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও পুলিশ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ টিমও কাজ করবে। সরকারের এসব উদ্যোগে সাধারণ মানুষ প্রশংসা করলেও সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ রয়েছে।
সূত্র জানায়, এবার রমজানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজারের ওপর নজর রাখা হবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর যে কোন কারসাজি অথবা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে। মূলত রমজানে কয়েকটি কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। তার মধ্যে একটি হলো চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম থাকা। কিন্তু এবার রমজানে সাধারণত যেসব পণ্যের অধিক চাহিদা থাকে সেগুলোর সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টা চালায়। এমন পরিস্থিতিতে বাজার তদারকির কাজটি ফলপ্রসূ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া জরুরি। যাতে এক বাজারে পণ্য নেই এমন মিথ্যা তথ্যে অন্য বাজারে অহেতুক কেউ কেউ দাম না বাড়াতে পারে। কখনো কখনো গুজবের ওপর ভিত্তি করেই পণ্যেও দাম হঠাৎই বাড়ানো হয়। ওসব এবার কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, রমজান মাস সামনে রেখে ৬টি পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি পণ্য- ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রমজানে যাতে এসব পণ্যসামগ্রীর কোন সঙ্কট তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২.৫ থেকে ৩ লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০-৯০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টনের। তাছাড়া ৫০-৬০ হাজার টন মসুর ডালের চাহিদা তৈরি হয়। গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে ছোলা ব্যতীত অন্যসব পণ্যের দাম বাড়ার তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে প্রতিবছর রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে নানা কথা হলেও শেষ পর্যন্ত ক্রেতাকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। এবার সাধারণ মানুষকে রমজানে নিত্যপণ্যে একটু স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হয়েছে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে ইতিমধ্যে পহেলা বৈশাখের আগে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অসাধু ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে বাড়িয়ে দিয়েছে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সবজিতে স্বস্তি নেই। বিশেষ করে টম্যাটো, শসা, করলা, লাউ ইত্যাদির দাম একটু বেড়ে গেছে। এভাবেই দাম বাড়ে। আর যা বাড়ে তা কমে না। বৈশাখের আগে একটু বাড়ল, শব-ই-বরাতে আরো একটু বাড়বে। এভাবেই ব্যবসায়ীরা রোজা আসতে আসতে যা বাড়ানোর তা বাড়িয়ে নেয়।
অন্যদিকে রমজানে দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এবার একটু আগে থেকেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে মনিটরিং টিম আরো বাড়ানো হবে। সরকার যে কোন মূল্যে জনগণকে রমজানে দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি দিতে চাই। আশা করা যায় রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এফএন/এমআর