ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সমুদ্রে মৎস্য প্রজননকালে শুধু বাণিজ্যিক জাহাজই নয়, বরং সব ধরনের নৌযানই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছে। বিগত ২০১৫ সাল থেকেই উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমে সামদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এতোদিন শুধুমাত্র বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও এবার সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সব ধরনের নৌযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলে বঙ্গোপসাগরে মাছ উৎপাদন বাড়বে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চলতি বছর ২৩ মে থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে, যা সব ধরনের নৌযানের ওপর কার্যকর হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকাকালে সারা দেশের কোনো যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক ও বাণিজ্যিক জাহাজ সমুদ্রের ৩ মিটার থেকে ২০০ মিটার গভীরতায় মাছ ধরতে পারবে না। সেজন্য যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানগুলোর নিম্ন আয়ের জেলে ও শ্রমিককে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই ব্যাপারে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণত বাণিজ্যিক জাহাজ প্রতিবার সমুদ্রযাত্রায় গড়ে ১৩ থেকে ১৫ দিন ও স্টিল বডির জাহাজ সর্বোচ্চ ৩০ দিন মৎস্য আহরণের অনুমোদন পায়। তবে যান্ত্রিক নৌযান সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মৎস্য আহরণের লাইসেন্স নিলেও সমুদ্রযাত্রার জন্য অনুমতি নিতে হয় না। আর অযান্ত্রিক নৌযানকে লাইসেন্সও নিতে হয় না। এ সুযোগে নিষেধাজ্ঞার সময় যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য আহরণ করে আসছে। ফলে অনেক সময় সামুদ্রিক রেণু-পোনাসহ অপরিপক্ব মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে। তাতে জেলেরা সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ কমে আসছে। তাই এবার সারা দেশের ৩২ হাজার ৮৫৯টি যান্ত্রিক নৌযান এবং ৩৪ হাজার ৮১০টি অযান্ত্রিক নৌযানকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০০১-০২ অর্থবছরে সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে ২৫ হাজার ১৬৫ টন এবং অন্যান্য নৌযানে ৩ লাখ ৯০ হাজার ২৫৫ টন মাছ আহরণ করা হয়েছিল। তার বিপরীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাণিজ্যিক জাহাজ ৭৬ হাজার ৮৮৫ টন ও অন্যান্য নৌযান ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৫ টন মাছ আহরণ করে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজে ১ লাখ ৫ হাজার ৩৪৮ টন ও অন্যান্য নৌযান ৫ লাখ ২১ হাজার ১৮০ টন, ২০১৬-১৭ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ৮ হাজার ৪৭৯ টন ও অন্যান্য নৌযান ৫ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৭ টন এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে বাণিজ্যিক জাহাজ ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ টন ও অন্যান্য নৌযান ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টন মাছ আহরণ করে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর মাছ আহরণ দিন দিন বাড়লেও যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানগুলোর সামুদ্রিক মত্স্য আহরণের প্রবৃদ্ধি শ্লথ।
সূত্র আরো জানায়, সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর পার্ট ১১ রোলস ৫৫ (২) বির ক্ষমতাবলে সরকার প্রজনন মৌসুমে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৫ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা জারির সময় সব নৌযানকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। তবে শুরুতে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। দেশে এ ধরনের ২৪৮টি বাণিজ্যিক জাহাজের মৎস্য আহরণের অনুমোদন রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১৮০টি জাহাজ নিয়মিত সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ওসব জাহাজ সমুদ্রে মাছ ও চিংড়ির মতো খোলসযুক্ত জলজ প্রাণী শিকার করতে পারে না। তবে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকায় সমুদ্রে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বিঘিœত হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মো. মসিউর রহমান জানান, এবার থেকে কাঠের নৌযানকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কেননা বাণিজ্যিক জাহাজ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরলেও সামুদ্রিক মাছ যেসব অঞ্চলে ডিম ছাড়ে সেখানে কাঠের নৌযান মাছ আহরণ করে। ফলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান মালিকরা তাদের শ্রমিক ও জেলেদের নিষেধাজ্ঞার সময় মাসিক ভিত্তিতে চাল কিংবা আর্থিক সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। সব ধরনের নৌযান নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ না ধরলে আগামীতে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়বে।
এফএন/এমআর