প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি খালেদা জিয়ার একান্ত ব্যাপার: ফখরুল

প্রথম পাতা » রাজনীতি » প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি খালেদা জিয়ার একান্ত ব্যাপার: ফখরুল
সোমবার ● ১৫ এপ্রিল ২০১৯


চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাজনীতিতে যে আলোচনা চলছে, সেটা একান্তই খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন। বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্যারোল আমাদের দলের বিষয় না, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ, এটা তাঁর একটা বিষয়। আরেকটা তাঁর পরিবারের বিষয়। সুতরাং এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি। একপর্যায়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে বিএনপি সংসদে যাবে। জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ রকম কোনো ইনফরমেশন আমাদের কাছে নেই। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আমরা আজকে শপথ নিয়েছি আমাদের আন্দোলন বেগবান করব বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বাংলা নববর্ষে ফখরুলসহ দলের তিনজন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, অনেকদিন পর রবিবার বাংলা নববর্ষে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সীমিত পরিসরে আমরা তিনজন দেখা করার অনুমতি পেয়েছি। এ সময় মূলত তাঁর স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও তাঁর মামলার আইনগত দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশনেত্রী দলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে বলেছেন এবং দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সংসদে যাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে ফখরুল আরো বলেন, এটাকে তো আমরা নির্বাচিত বলছি না, আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না, তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন-বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপ থাকে, কৌশল থাকে, আন্দোলন বলতে শুধু হরতাল জ¦ালাও-পোড়াও বোঝায় না। আমি এই বিষয়টার সঙ্গে একমত হতে পারি না।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আমরা আন্দোলন বলতে বুঝি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। সেটাকে আমরা আন্দোলন বলছি। তার জন্য আমরা কাজ করছি। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রীকে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আমরা সক্ষম হব।
এর আগে পহেলা রোববার বৈশাখ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তাদের নেত্রী ‘অত্যন্ত অসুস্থ’। রবিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের বাইরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডাম বেশ অসুস্থ, অত্যন্ত অসুস্থ। উনি খেতে পারছেন না এখনো। এখনো তিনি পা ভাঁজ করতে পারেন না। তার বাঁ হাত সেই আগের মতই রয়ে গেছে। ওই হাতে কাজ করতে পারছেন না। এক কথায় ম্যাডাম যথেষ্ট অসুস্থ আছেন। আগের চেয়ে খুব বেশি ইম্প্রুভ করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ১ এপ্রিল নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন তিনি। তাকে দেখতে বিকাল ৪টার পর হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা যাওয়ার আগেই খালেদা জিয়ার জন্য কিছু ফল ও খাবার হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে বিএনপি নেতারা জানান।
৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। গতবছর হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও তাকে হুইল চেয়ারে দেখা গিয়েছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার দিন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেছিলেন, গাঁটে ব্যথার পাশাপাশি খালেদার ডায়াবেটিসের মাত্রা ছিল ‘একটু বেশি’। তাছাড়া তার খাওয়ার রুচি কমে গেছে। পরদিন এক ব্রিফিংয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ‘ক্রমশঃ উন্নতি’ হচ্ছে। তবে ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সে সময় বলেছিলেন, ‘চাকরির মায়ায়’ পরিচালক ‘সরকারের ভাষায়’ কথা বলছেন। খালেদা জিয়াকে দেখে বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বার বার যেটা বলেছিলাম যে, তার স্পেশালাইজড ট্রিটমেন্ট দরকার, সেই ট্রিটমেন্ট এখনো শুরু হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়নি। আজকেও আমরা বলছি, তার পছন্দ মত বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসা করানো হোক। এটা জরুরি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ম্যাডাম দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বলেছেন যেন দেশবাসী সচেতন হয়, গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে। প্যারোলে খালেদার মুক্তি বা সংসদে বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, না, এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা করিনি। আমরা তার চিকিৎসার ব্যাপারে এসেছিলাম, তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তারা তাদের নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছিলেন। এতদিন সেই অনুমতি পাননি। বিএনপি নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দলের চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৮:৫৯ ● ৬৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ