ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জ্বালানি তেল বাবদ বিমানের কাছে গত ৭ বছরে বাংলাদেশ পট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিতরণ কোম্পানি পদ্মা অয়েল পদ্মা অয়েলের বকেয়া ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও বিমান পাওনা পরিশোধ করছে না। আর বিমান সময় মতো অর্থ না দেয়ায় পদ্মা অয়েলও বিভিন্ন রাষ্ট্র্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। বরং উল্টো সুদ গুনছে। এমন অবস্থায় বিপিসি সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়ে পাওনা আদায়ে সহযোগিতা চেয়েছে। বিপিসি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি করে আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির বিতরণ কোম্পানি পদ্মা অয়েল বিমানে জেট ফুয়েল সরবরাহ করে। আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে একক বৃহত্তম ক্রেতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কম দামে জেট ফুয়েল সরবরাহ করে বিপিসি। নতুন ব্যবস্থায় শুধু ৩টি খাতে তেলের আমদানি ব্যয়ের বাইরে অর্থ বিমানকে দিতে হবে। সেগুলো হলো- বিপিসির জন্য ৫ শতাংশ মার্জিন, ফিন্যান্সিং চার্জ ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট সারচার্জ। ওই নিয়ম অনুসারে আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে তেল কিনলে বিপিসিও বিমানের কাছে দাম কম রাখে। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসে জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ করে বিপিসি। তবে বিমানের ৭টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ওই নিয়ম প্রযোজ্য হয় না। সেক্ষেত্রে বিমানকে প্রচলিত বাজারমূল্য ও তার সঙ্গে অন্যান্য চার্জ দিয়েই তেল কিনতে হয়। বিমান প্রতিমাসে পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কেনে। আর বকেয়া অর্থের সুদ বাবদ গুনতে হয় ৩৪ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বিমানের কাছে ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা অয়েলের পাওনা জমেছে ২ হাজার ২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তার মধ্যে মূল অর্থ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা আর বাকি ৬৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সুদ। বিপিসি সুদের হার ধরেছে গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় গতবছরের জানুয়ারি থেকে বিমানের কাছে নগদে তেল বিক্রি শুরু করে বিপিসি। তবে বিমান ছাড়া অন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানি বিপিসির কাছ থেকে নগদ অর্থে জ্বালানি সংগ্রহ করে। বিগত ৮ বছরের পাওনা নিয়ে বিমানের সঙ্গে বিপিসির অনেক আলোচনা হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। পরে বিপিসি, বিমান ও জ্বালানি বিভাগ মিলে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে বিমানের কাছে বিপিসির পাওনা রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে বিমান কবে নাগাদ ওই টাকা দেবে, তার কোনো ঠিক নেই।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। ওই অর্থবছরে বিমানের মোট আয় ছিল ৪ হাজার ৯৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে আগের তিন অর্থবছরে বিমান লাভে ছিল। তার মধ্যে ২০১৬-১৭ সালে ৪৬ কোটি ৭৬ টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লাভ করেছে বিমান। বিগত অর্থবছরে উড়োজাহাজের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে খরচ বৃদ্ধি, বৈদেশিক মূদ্রার বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও এয়ারক্রাফট ক্রু মেইনটেন্যান্স ইন্স্যুরেন্স (এসিএমআই) ভিত্তিতে উড়োজাহাজ ব্যবহারের কারণে বিমানকে ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। তবে বিমানকে লাভজনক করার লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরের ১৩টি উড়োজাহাজ ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে চলাচল করছে। ওই গন্তব্যগুলো হলো- কলকাতা, ইয়াংগুন, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, কাঠমান্ডু, দুবাই, আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, কুয়েত, রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম ও লন্ডন। তাছাড়া সাতটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্য হলো- চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, কক্সবাজার ও বরিশাল।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, বিপিসির কাছ থেকে এখন নগদে তেল কেনা হচ্ছে। তবে বিপিসি বকেয়া তেলের যে দাম ধরেছে, তা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মূল্যের বিষয়টি সুরাহা হলে বকেয়া ক্রমান্বয়ে পরিশোধ করা হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জানান, বিমানের কাছে টাকা পাবে পদ্মা অয়েল। আবার পদ্মা অয়েলের কাছে টাকা পাবে ব্যাংকগুলো। ওই অর্থ বিমানকে পরিশোধ করতে হবে। পাওনার বিষয়ে জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও চিঠি দেয়া হবে।
এফএন/এমআর