কামরুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে॥
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের জন্য পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতাদের কাছে ইলিশের চাহিদা বেশি ছিল। তবে বাজারে ইলিশ অনেক কম। তাই দাম চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ইলিশের মৌসুম এখনও শুরু হয়নি।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামীকাল পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান থাকলেও প্রথম প্রহরে এক থালা পান্তা ভাতের সঙ্গে এক টুকরো ইলিশ খাওয়ার জন্য উপজেলার সদরের প্রাণকেন্দ্র বাহেরচর বাজারে ক্রেতাদের অনেক ভির ছিল। কিন্তু তেমন ইলিশ ছিল না। ছোট আকাড়ের মাত্র কয়েকটি ইলিশ নিয়ে দুই ব্যবসায়ী বাজারে এসেছিল । মাছের ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। প্রতি কেজির মূল্য ১৫০০ টাকা। বৈশাখের কারণে দাম বেড়ে দিগুন হয়ে গেছে। অথচ অন্যান্য সময় এই ইলিশের কেজি সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ছিল। এছাড়া খালগোড়া, পুলঘাট, নেতা, নিজকাটা ও কোড়ালিয়াসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
বাহেরচর বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি একটি কোম্পানীর চাকুরিজীবি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের লোকদের আবদারের কারণে পহেলা বৈশাখের জন্য ইলিশ কিনতে বাজারে আসছি। কিন্তু বাজারে এসে দেখি, ইলিশের গায়ে আগুন। ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৫০০ টাকা। আর এর চাইতে বেশি ওজনের ইলিশের কাছেতো যাওয়াই যায় না। তাই অনেকেই ইলিশের গন্ধ শুকে বাড়ি চলে গেছে।’
স্থানীয় কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, পহেলা বৈশাখের কারণে কয়েকদিন ধরে ক্রেতাদের কাছে ইলিশের চাহিদা বেশি। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ইলিশ নেই। ছোট ছোট ইলিশ আসে। সেই ইলিশ বেশি টাকায় কিনতে হয়, বেশি টাকায় বেচতে হয়। আর বড় সাইজের ইলিশ পাওয়াতো সোনার হরিণ পাওয়ার সমান। তবে ভাগ্যবসত ১ কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া গেলেও ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় কিনতে হবে। এর চাইতে চড়া দামেও কিনতে হতে পারে। অবশ্য, বৈশাখের শেষে দাম আবার হাতের নাগালে চলে আসবে।
উপজেলার মৌডুবি জাহাজমারা স্লুইসঘাটের মৎস্য আড়ৎ লিমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী খোকন ভূইয়া বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে জেলেদের জালে সন্তোষজনক ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর বড় ইলিশ আড়তের মাধ্যমে ঢাকা ও যশোর রপ্তানি করা হয়। যার কারণে স্থানীয় বাজারে বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার পহেলা বৈশাখে বাজারে ইলিশ নেই বললেই চলে।’ ওই এলাকার ইলিশ জেলে নূর জামাল মুন্সি বলেন, ‘সারাদিন নদীতে জাল ফালাইয়া ২-৪ টা বড় ইলিশ ধরা পড়ে। সেগুলো আড়তেই বিক্রি করে দেই। আর ছোট সাইজের মাছগুলো বাজারের খুচরা মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, এখনও ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হয়নি। বৈশাখের ১৫ তারিখ থেকে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলেরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আর জেলেরা জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি মেনে চলছে। তাই বাজারে ইলিশ কম।’
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘এই সময় বাজারে বড় ইলিশ কম দেখাটা খুব-ই স্বাভাবিক। আমরা যদি ইলিশের জীবনচক্র দেখি, তাহলে দেখব ইলিশ সাগর থেকে উপকূলীয় বিভিন্ন নদীতে আসে ডিম দিতে, তারপর বাচ্চাগুলো আনুমানিক ৬ মাসের মত এই নদীগুলোতে লালিত পালিত হয়। যার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা বা বাচ্চা ইলিশ ধরা, মজুদ, পরিবহণ ও বিপণন নিষিদ্ধ করেছে এবং মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস উপকূলীয় ছয়টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং আশপাশের নদীতে যা ইলিশ রয়েছে তার বেশিরভাগই জাটকা/ বাচ্চা ইলিশ। তাই এই সময় বড় ইলিশ পাওয়ার কথা না। আমরা যদি এই সময়ে ইলিশ নাহ খুঁজি তাহলে জেলেরা বেশি লাভের আশায় অবৈধভাবে জাটকা ইলিশ ধরবে না। আমরা ইলিশ মৌসুমে অনেক বড় ইলিশ পাবো।’