ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে ঘিরে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে নিরাপত্তাবলয় থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে উন্মুক্ত স্থানে সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নির্দেশনামূলক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
উপস্থিত সাংবাদিকদের নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে কমিশনার বলেন, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিলসহ সব অনুষ্ঠান ভেন্যুতে থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ভেন্যু ‘ডগ স্কোয়াড’ দিয়ে ও ম্যানুয়ালি সুইপিং করানো হবে। সমগ্র এলাকা থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায় এবং রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হবে কন্ট্রোল রুম থেকে। জনসাধারণ যাতে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে রমনা পার্কে হেঁটে যেতে পারে, সে জন্য ট্রাফিক ডাইভারশন দিয়ে, রোড ব্লক করে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে র্যারিকেডের সামনে তল্লাশি করে অনুষ্ঠানস্থলের উদ্দেশে হেঁটে যেতে দেওয়া হবে। আমরা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সমন্বিত ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, অনুষ্ঠানস্থালে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হবে। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে ‘বাইনোকুলার’ দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে পুলিশ। প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি ও সিটিটিসির সদস্যরা। রমনা পার্ক, রবীন্দ্রসরোবর ও হাতিরঝিল এলাকায় থাকবে নৌ পুলিশ ও ডুবুরি দল। থাকবে মেডিকেল টিম, ফায়ার টেন্ডার ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশেই থাকবে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক থাকবে সেন্ট্রালি মাইকিংয়ের ব্যবস্থা।
‘পহেলা বৈশাখ’কেন্দ্রিক সব অনুষ্ঠানস্থল থাকবে ধূমপানমুক্ত। এ ছাড়া ইভটিজিং প্রতিরোধে কাজ করবে বিশেষ টিম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ধূমপায়ী ও ইভটিজারদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কমিশনার বলেন, রমনা পার্কে ছায়ানটের অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক থাকবে অন্তঃবেষ্টনী ও বহিঃবেষ্টনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহির পথের নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। নির্দিষ্ট পথ দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে হবে। পহেলা বৈশাখে প্রত্যেক নাগরিককে ফুল ও বাতাসা দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ছাড়া আটটি স্থান থেকে জনসাধারণের মাঝে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করবে ডিএমপি।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও একই রুটে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রার পুরো রুট থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। সোয়াট, ডিবি, ইউনিফর্মে থাকা পুলিশ দিয়ে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ বেষ্টনী করা হবে। পথের মধ্যে কাউকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। মুখোশ মুখে পরা যাবে না। তবে হাতে রাখা যাবে। কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ব্যানার নিয়ে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেককে তল্লাশি করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে।
নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কমিশনার আরো বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে কোনো প্রকার ব্যাগপ্যাক, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, দাহ্য পদার্থ, ব্লেড, নেইল কাটার সঙ্গে নিয়ে আসা যাবে না। তবে নারীরা ছোট হ্যান্ড পার্স নিয়ে আসতে পারবেন। বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করে সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বৈশাখি উৎসব ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি নেই জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, রমনা পার্ক ও সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ পথে আর্চওয়ে থাকবে। প্রবেশ পথে পুলিশের পক্ষ থেকে আগতদের ফুল ও বাতাসা দিয়ে বরণ করা হবে। রমনা পার্কের রেস্তোরাঁ গেইট, অস্তাচল গেইট, অরুনোদয় গেইট দিয়ে শুধু প্রবেশ করা যাবে, আর উত্তরায়ন গেইট (মিন্টো রোডের পশ্চিম প্রান্ত) ও বৈশাখী গেইট দিয়ে বের হতে পারবেন। শ্যামলীমা গেইট, স্টার গেইট ও নতুন গেইট (বৈশাখী ও অস্তাচল গেইটের মাঝামাঝি) দর্শনার্থীরা প্রবেশ ও বের হতে পারবেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন গেইট, বাংলা একাডেমির বিপরীতে নতুন গেইট ও তিন নেতার মাজার সংলগ্ন গেইট দিয়ে শুধু প্রবেশ, রমনা কালী মন্দির গেইট ও আইইবি গেইট দিয়ে বের হওয়া যাবে বলে জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট ও টিএসসির বিপরীত পাশের গেইট দুটি বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মুহাম্মদ মুরাদ আলি জানান, পহেলা বৈশাখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় জনসাধারণ যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘেœ নববর্ষের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে সেজন্য যান চলাচলেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডাইভারশন ২৬ পয়েন্টে: সোনারগাঁও ক্রসিং, বাংলা মটর ক্রসিং, পরিবাগ গ্যাপ, মৎস্য ভবন ক্রসিং, কার্পেট গলি, নেভাল চিফ গলি, সাকুরার গলি, পুলিশ ভবন ক্রসিং, সবজি বাগান ক্রসিং, মিন্টো রোড পূর্ব প্রান্ত, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং, সুগন্ধা ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, শিল্পকলা একাডেমি গলি, দুদকের গলি, ইউবিএল ক্রসিং, জিরো পয়েন্ট ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, রোমানা চত্বর ক্রসিং, বকশী বাজার ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, কাঁটাবন ক্রসিং, আজিজ সুপার মার্কেট ক্রসিং, প্রশাসন একাডেমি গলি ও শাহবাগ ক্রসিং।
গাড়ি পার্কিং (এক লেনে): নৌবাহিনী ভর্তি তথ্য কেন্দ্র হতে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত (উত্তর দিকের গাড়ি সমূহ), জেব্রা ক্রসিং থেকে ইউবিএল এবং আবদুল গণি রোড (পূর্ব -দক্ষিণ দিকের গাড়ি), কার্জন হল থেকে বঙ্গবাজার হয়ে ফুলবাড়িয়া (দক্ষিণ দিকের গাড়ি), মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচায় (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি), শিল্পকলা একাডেমি গলি (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি), সুগন্ধা হতে অফিসার্স ক্লাব (ভিআইপি ও মিডিয়ার গাড়ি) ও কাঁটাবন হতে নীলক্ষেত হয়ে পলাশী (দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গাড়ি)।
৭ সড়কে যান বন্ধ: বাংলা মোটর- রূপসী বাংলা (ইন্টার কন্টিনেন্টাল)-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর, রূপসী বাংলা-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন, পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং, বকশী বাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত-টিএসসি।
যান চলাচলের বিকল্প পথ: মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউ মার্কেট-আজিমপুর-বকশী বাজার-চাঁনখার পুল-গুলিস্তান। রাসেল স্কয়ার-সোনারগাঁও-রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান। মহাখালী-সাতরাস্তা-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান, ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও। ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলা মটর-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমনি-পল্টন-মতিঝিল।
এফএন/এমআর