ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
এবার দেশে লক্ষ্যমাতার চেয়েও বেশি আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৬ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার টন। মূলত আমন ধানের নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাত, আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও সরকারের সঠিক নীতি উৎপাদনের সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আর বিগত ২০১৭ সালে আমনের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছায়। ওই সময় বন্যায় ফসল ভাসলেও কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ান। তবে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের গোলা ভরে গেলেও বাজারে বর্তমানে ধানের মূল্য নিয়ে চাষীরা নাখোশ। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি সংশ্লিষ্টরা খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যে কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রমেই দেশের কৃষিজমি কমে আসছে। কেউ কেউ কৃষি জমিগুলো ভরাট করে বসতবাড়ি কিংবা মিল-কারখানা গড়ে তুলছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টিতেও এসেছে। ইইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদনকালে বারবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। তবে মাঠপর্যায়ে এখনো কৃষিজমি ভরাট ও বিভিন্ন কারখানা স্থাপন থেমে নেই। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যে নিরাপত্তা দেয়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রতিনিয়তই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অল্প জমিতে অধিক ফলনের জন্য প্রতিনিয়তই কাজ করছে কৃষি বিভাগ। আর সেই প্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে নানা উদ্যোগ আর কৃষকদের নানা পরামর্শ প্রদানের কারণেই দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমন চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়নো হয়। আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে কৃষি সংশ্লিষ্টরা এবার আমন রোপণের সময়ই বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন। বাস্তবে হলোও তাই। আমনে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ লাখ টন ফলন বেশি হয়েছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ৯৯৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। তার মধ্যে বোনা আমন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৯ হেক্টর জমি আর ৫৩ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমি ছিল রোপা আমনের লক্ষ্য। চলতি মৌসুমে জমির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার মধ্যে উফশী জাত ৪২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি, হাইব্রিড ১ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমি এবং স্থানীয় জাতের ৯ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। কন্তু আবাদ পরবর্তী সময়ে জানা গেছে ৫৬ লাখ ৪৩ হাজারের মতো হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যা প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি। ফলে এবার সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৬ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তার মধ্যে বোনা আমন থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টন আর রোপা আমন থেকে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। রোপা আমনের মধ্যে উফশী জাতের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন লক্ষ্য ছিল। উফশী জাত থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার টন, স্থানীয় জাত থেকে আসবে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টন এবং হাইব্রিড থেকে ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে আমন উৎপাদনে বাম্পার ফলন প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম জানান, দেশে কৃষি জমির সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অল্প জমিতে অধিক ফলনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যায়। ফলে এবারও ১৩ লাখ টনেও বেশি আমন উৎপাদন হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ জনগণকে নিরাপদ খাদ্যের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জানান, এবার আমনে ভাল উৎপাদন হয়েছে। আর উৎপাদনের সাফল্যের পেছনে অনেক কারণই রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নতুন আবিষ্কার করা জাতগুলোর বীজ কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ওই বীজগুলো মাঠে চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রণোদনাও রয়েছে। এখন কৃষকরা ভাল দাম পেলে আরো বেশি উৎপাদন করতে উৎসাহিত হবে। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে সব মিলিয়ে উৎপাদন বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এ বছর আমনে উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যের চেয়ে ১৩ লাখ টন বেশি। আমাদের এখন পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবতে হবে।
এফএন/এমআর