ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মেডিকেল কলেজের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিরোধিতা করলেও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা খুবই জরুরি।
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাসের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। শুধু পরীক্ষার্থী নয়, তাদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকেন। এতে সময় ও অর্থ অপচয় এবং কষ্ট হয় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবে রাষ্ট্রপতিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নতুন শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় শিক্ষাবিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবার মতবিনিময় করেন। এ সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টিও উঠে আসে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এটি (সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা) খুবই জরুরি। আমি জানি কিছুকিছু বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কারণে তারা এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য খুবই জরুরি। অনেক হয়রানি কমে যায়, অর্থ অপচয় কমে যায়, তাদের কষ্ট কমে যায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব না সারাদেশে এখানে ওখানে সেখানে গিয়েৃ। ছেলেরা অনেক সময় আমি শুনি তারা মসজিদে রাতে ঘুমিয়ে পরীক্ষা দেয়। মেয়েরা কোথায় গিয়ে থাকবে? তাদের বাবা-মা এবং সব বাব-মা’র পক্ষে কি সম্ভব? এটা তো সম্ভবও নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে মেডিকেল কলেজগুলো একদিনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। তবে পৃথক ফরম বিক্রি ও পরীক্ষা সংক্রান্ত আনুসঙ্গিক অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমরা যদি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারি, তাহলে আমরা কেন অন্য ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারবো না? আমার বিশ্বাস যে আমাদের যদি সবার একটু সদিচ্ছা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আমরা পারব। এ ক্ষেত্রে আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সহযোগিতা দেবেন। এদিকে, চলতি বা আগামি মাসের মধ্যে আড়াই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি (মাসিক বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তির ব্যাপারে গতবছর চারটি ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো যে তথ্য দিয়েছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে আমরা ওই যোগ্যতাগুলোর নিরিখে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নিরূপণ করেছি। সেটির সংখ্যা আড়াই হাজারের কিছু বেশি বা কাছাকাছি। সেই সংখ্যক প্রতিষ্ঠান, আমাদের যখন এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে সেই সিদ্ধান্তের পরে এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সরেজমিনে যাচাই করা হবে। আমি আশা করি না খুব বেশি ব্যত্যয় হবে। সবগুলো একসঙ্গে ঘোষণা হবে কিনা- প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা একবারেই করতে চাইছি যতটুকুই পারি। শিক্ষকরা যেমন বলেছেন আমাদের সবাইকে দেন, কম করে হলেও দেন। ধরে নিলাম, এক হাজার বিদ্যালয়কে দেওয়া হবে। এখন এক হাজার বিদ্যালয়ের যোগ্য যদি হয় দু’হাজার, আমরা যদি এক হাজারকে দেই, একশ পার্সেন্ট এক হাজারকে দিলাম। এখন আমি পেলাম, উনি পেলেন না, পাশাপাশি দু’টো স্কুল। উনিও যোগ্য নির্বাচিত হয়েছেন, আমিও যোগ্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি পেলাম, উনি পেলেন না- এরমধ্যে একটা অন্যায্যতার বিষয় চলে আসবে। আমরা চাই সবার প্রতি একটা ন্যায্য আচরণ করতে। সেজন্য আমাদের অবস্থানটি এরকম- আমরা চাই যে’কটি প্রতিষ্ঠান যোগ্য নির্বাচিত হবে তাদের সবাইকেই দেবে। সেটি যদি সরকার পারে একশ পার্সেন্ট; যদি কমও হয়, ২৫ পার্সেন্টও হয় তাহলেও সেটি দিয়ে আমরা শুরু করতে চাই। যোগ্য নির্বাচিত সব প্রতিষ্ঠানকে চাই। তারপর ধাপে ধাপে আমরা করলাম। পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিয়ে এসে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেগুলো যোগ্য বিবেচিত হতে পারেনি তাদেরও আমরা উৎসাহিত করবো, চেষ্টা ও সহযোগিতা করবো, তারাও যেন সেই জায়গায় আসতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা আবার তাদের ধাপে ধাপে এমপিওভুক্তির চেষ্টা করবো। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক জায়গায় প্রাপ্যতার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠান আছে, সে ক্ষেত্রেও আমাদের একটু চিন্তা-ভাবনা করতে হবে যে কিছু প্রতিষ্ঠান একীভূত করে দিতে পারি কিনা, অন্য কীভাবে করতে পারি। যেমন, গতবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠা কেউই পাস করেনি, সেরকম বিষয় যদি একেবারে থাকে- সেটি আসলে কাক্সিক্ষত নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সবশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার। এরপর থেকে এমপিওভুক্তি বন্ধ ছিল। আর বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৮১০টি। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। এদের পিছনে প্রতি মাসে সরকারের খরচ হয় প্রায় ৯৪২ কোটি টাকা। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছুকিছু সরকারিকরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আছে আরো প্রায় দুই হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এফএন/এমআর