ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে দশম স্প্যান বসানোর পর দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ৩১টি স্প্যান বসলেই। সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর জানান, বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১টায় সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।
এর আগে সকাল ৮টা ৩২ মিনিটের দিকে তিন হাজার ৬০০টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেনে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে যাত্রা শুরু করে। যা স্পটে পৌঁছায় সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের দিকে। নবম স্প্যান বসানোর ১৯ দিনের মাথায় বসলো দশম স্প্যানটি। প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, দুপুর পৌনে ১টায় দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় স্প্যানটি বসানো হয় ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের উপর। মাওয়া প্রান্তে প্রথম স্থায়ী স্প্যান স্থাপন হলো। তবে সকালের দিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর কুয়াশার কারণে স্প্যান নিয়ে নির্দিষ্ট পয়েন্টে যেতে কিছুটা দেরি হয়। এবার ভালোভাবেই দশম স্প্যানটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর দেড় কিলোমিটার।
তিনি আরো জানান, ২, ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২৩, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর পিলারের কাজ শেষ। নদীতে যে ২৬২টি পাইল বসবে তার ২১৮টি পাইল শেষ হয়েছে। মোট ২৯৪টি পাইলের মধ্যে শেষ হয়েছে ২৫০টি পাইল। চলতি মাসের ২০ তারিখ ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ৬-সি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে। জাজিরা প্রান্তে সেতুর স্প্যানগুলোতে ২৭২টি রেলওয়ে বক্স স্ল্যাব এবং রোডওয়ে ৪টি বক্স স্ল্যাব বসানো হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ এবং মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানবহনকারী ক্রেনটিকে দেখা যাচ্ছিলো না। ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে ধীরে ধীরে ক্রেনটি থেকে স্প্যানটি ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের পজিশন অনুযায়ী রাখা হয়। এরপর ক্রেনের সাহায্যে ধীরে ধীরে স্প্যানটিকে পিলারের বিয়াংয়ের উপর বসানো হয়। এর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা খুঁটিনাটি দেখা হয়। তবে আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে কিছুটা ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের। জাজিরায় সেতুর নয়টি (৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২) পিলারে আটটি স্প্যান থাকছে; আর মাওয়ায় প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বরে একটি অস্থায়ী স্প্যান আর এখন ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে একটি স্প্যান বসছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। দেড় মাস পর ১১ মার্চ এ প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। তারপর ছয় মাস ২৫ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। ২৮ দিনের মাথায় ২০ ফেব্রুয়ারি বসে সপ্তম স্প্যানটি। এর একমাস পরে ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যানটি। আর মাওয়া প্রান্তে একটিমাত্র অস্থায়ীভাবে স্প্যান বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪ টি পাইল রয়েছে। এর মধ্যে নদীতে বসবে ২৬২ টি পাইল। মূল সেতুর ২৯৪ টি পাইলের মধ্যে ইতোমধ্যে ২৪৭ টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে সে দেশেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
এফএন/এমআর