সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট॥
কারা সঞ্চয়পত্র বেশি কিনছেন জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর তা জানে না। ওই বিষয়ে কোনো ডাটাবেইজ না থাকায় সঞ্চয় অধিদফতরের কাছে ওই সংক্রাস্ত কোনো তথ্য নেই। এমন পরিস্থিতিতে এবার তৈরি হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের ডাটাবেইজ। আর ডাটাবেইজ তৈরি হয়ে গেলে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর সনদ (টিআইএন) ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হবে। মূলত সঞ্চয়পত্র খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বন্ধের লক্ষ্যেই সঞ্চয়পত্রে এনআইডি ও টিআইএন যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর চুক্তি করতে যাচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন সরকার সঞ্চয়পত্র খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। কারণ, ধারনা করা হয় দুর্নীতি করে আয় করা অর্থের বড় একটা অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হয়। আর সঞ্চয়পত্রে জনসাধারণের বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রা বাজারে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। কারণ সুদহার বেশি হওয়ায় ওই খাত থেকে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশই আসছে। তাতে বাজারে সুদহার কমানো যেমন সহজ হচ্ছে না, তেমনই সরকারের বেশি সুদবাহী দায় বাড়ছে। অন্যদিকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের কালো টাকার একটা বড় অংশই সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে। আর সঞ্চয়পত্র কিনছে ধনীরাই। সাধারণ বা স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীদের সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবে ৯০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র কিনছেন বড় পদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। ৮৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র মাত্র ১২ শতাংশ লোকের কাছে বিক্রি হচ্ছে। আর মাত্র ১৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে বাকি ৮৮ শতাংশ লোকের কাছে। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমে গেছে। আবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেও খুব বেশি ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এমন অবস্থায় সঞ্চয়পত্রই একমাত্র ভরসা। আর ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়া অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। বিশেষ করে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে বেশি সুদ পাওয়া যায় তাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। আর বিক্রির মাত্রা বেড়ে যাওয়া পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের সংকট দেখা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও অব্যাহতভাবে বাড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম ৫ মাসে ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে’র পর থেকে এ হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ওই ডাটাবেইজের সঙ্গে সহজেই টিআইএন যুক্ত করা যাবে। তবে অনেকের মতে, সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন সনদ বাধ্যতামূলক করলে বিনিয়োগকারীদের বিড়ম্বনা বাড়বে। তবে তাতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শামসুন্নাহার বেগম জানান, সঞ্চয়পত্র খাতে টিআইএন অন্তর্ভুক্ত করতে এনবিআরের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। শিগগিরই চুক্তিও হবে। সম্প্রতি সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বৈঠকে সঞ্চয়পত্র খাতে টিআইএন সনদ ও এনআইডি বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।