আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
এবার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে পরেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ২০০১-০২ অর্থ বছরে নির্মিত ভবনগুলো ধসে পরায় আতঙ্কে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ভবন ধসে পরার খবর পেয়েও উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নেয়নি এবং বিদ্যালয় পরিদর্শনে যায়নি।
জানাগেছে, উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বুধবার সকাল নয়টার দিকে বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। শিশু শ্রেনীর কক্ষটিতে শিক্ষার্থীরা ব্যাগ রেখে বাহিরে যায়। এ সময় কক্ষের ছাদের বিম ধসে পড়ে। কিন্তু এতে কোন শিক্ষার্থী হতাহত হয়নি। ছাদের বিম ধসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভবনের ছাদের বিম ধসে পরার খবর পেয়েও উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নেয়নি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই বিদ্যালয় তিনি পরিদর্শনে যায়নি। দক্ষিণ তক্তবুনিয়া গ্রামে ১৯৯৩ সালে জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট একতালা ভবন নির্মাণ করেন। এ স্কুল ভবনের কাজ পায় ঠিকাদার মকবুল আহম্মেদ খাঁন। কাজের শুরুতেই নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ২০০৪ সালে ঠিকাদার ওই ভবনটি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই সময়ে এ স্কুল ভবন উদ্বোধন করেছেন তৎকালিন বিএনপির সাংসদ আলহাজ মতিয়ার রহমান তালুকদার। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৭ বছরের মাথায়ই ভবনের বিমে ফাটল ধরে পলেস্তারা পড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে ওই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে তালতলীর ছোটবগী পিকে ও তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করে। পরপর ২০০১-০২ অর্থ বছরে নির্মিত দুটি বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে পরায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরছে। এদিকে চতুর্থ দিনেও ছোটবগী পিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেনি।
বুধবার দুপুরে দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বিদ্যালয় শিশু শ্রেনীর একটি কক্ষের মাঝখানের বিম ধসে বড় বড় পলেস্তারা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেনীর শিক্ষার্থী নিলয়, পলক, সন্দীপ, প্রমিতা জানান, ক্লাসে ব্যাগ রেখে বাহিরে যাই। পরে এসে দেখি কক্ষের সব স্থানে ভবনের বিমের ভাঙ্গা টুকরা পড়ে আছে।
শ্রেনী শিক্ষক মোসাঃ নাজমুন নাহার বলেন, কক্ষের তালা খুলে লাইব্রেরীতে আমি বসে ছিলাম। এর একটু পরেই একটি শব্দ পাই। শ্রেনী কক্ষে গিয়ে দেখি ছাদের বিম ও পলেস্তারা মেঝতে পড়ে আছে। কিন্তু ওই সময় কোন শিক্ষার্থী শ্রেনী কক্ষে ছিল না, বিধায় কেউ আহত হয়নি।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ শহীদুল্লাহ বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বেই ভবনের ছাদের বিম ধসে পরেছে। এ ভবনটি ২০০১ সালে ঠিকাদার মোঃ মকবুল আহম্মেদ খান নির্মাণ করেছেন এবং তৎকালিম বিএনপি’র সাংসদ আলহাজ মতিয়ার রহমান তালুকদার উদ্বোধন করেছেন। তিনি আরো বলেন, নির্মাণের সাত বছরের মাথায় ওই ভবনে ফাটন ধরে পলেস্তারা খসে পরতো। গত দুই বছর পূর্বে ভবনটি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভক্ত হয়েছে।
ঠিকাদার মোঃ মকবুল আহম্মেদ খান কাজ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার লাইসেন্সে এ কাজ হয়নি।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। ভবনের একটি কক্ষের ছাদের বিম ধসে পরেছে। কিন্তু ক্লাস শুরু পূর্বে ছাদের বিম ধসে পরায় কোন শিক্ষার্থী হতাহত হয়নি।
আমতলী এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ভবনের ছাদ ধসে পরার কোন খবর পাইনি। এই মাত্র আপনার কাছে শুনলাম। খবর পাইলেও কি কববো? ভবন ধসে পরলে ভালো হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, বিম ধসে পড়া কক্ষটিতে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকী দুই কক্ষে পাঠদান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, একটি টিন সেট ভবন নির্মাণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর