শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য!

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য!
মঙ্গলবার ● ৯ এপ্রিল ২০১৯


---

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঘড়ির কাটায় রাত ৭ টা ৩০ মিনিট। স্কুলের মধ্যে বেশকিছু ছাত্র/ছাত্রীর জটলা। কাছাকাছি গেলে বন্ধ একটি কক্ষের মধ্য থেকে গানের শব্দ শোনা যায়। পরে জানালা দিয়ে দেখা গেলÑহিন্দি ও বাংলা গানের তালে একের পর এক ছাত্রীরা নৃত্য পরিবেশন করছে। কারণ, ওই রাতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসেছেন। তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের বাড়ি থেকে খবর দিয়ে এনে এ আয়োজন করেছেন শিক্ষকেরা। আয়োজন শেষে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়েই রাত্রি যাপন করেন। সোমবার রাতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের ত্রৈমাসিক সভা ও দুদকের সততা সংঘের সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নিতে পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন আসেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরে রাত ৭ টা ১০ মিনিটে তিনি নৈশ্য ভোজ ও রাত্রি যাপনের জন্য উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। তাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান সেখানে নিয়ে যান। ওই রাতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে তাৎক্ষনিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক আশপাশের ছাত্র/ছাত্রীদের বাড়ি থেকে জরুরি ভিত্তিতে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন। তাদেরকে একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়ে ওই কর্মকর্তাকে খুশি করতে নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করা হয়।
পরে রাত ৭ টা ১০ মিনিটে কক্ষটি বন্ধ করে একের পর হিন্দি ও বাংলা গান বাজিয়ে ছাত্রীদের নৃত্য শুরু হয় (ছাত্রীদের নিত্য পরিবেশনের ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে)। এসময় ওই কক্ষে বসে  জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুকুসহ কয়েকজন নিত্য উপভোগ করেন। রাত ৯ টায় অনুষ্ঠান শেষ করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নৈশ্য ভোজ করে ওই বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করেন।
ওই আয়োজনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক জানান, সোমবার রাতে বিদ্যালয়ের আশপাশের ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষকেরা জরুরি খবর দেয়। খবর পেয়ে অন্তত ৩০ জন ছাত্রী ও ২০ জন ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। পরে নিত্যের আয়োজন করা হয়। বিষয়টি এলাকাবাসীর চোখে দৃষ্টিকটুর। স্থানীয় চিত্রশিল্পী শাহ আলম বলেন, ‘অফিসারকে খুশি করতে এভাবে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নাচগান করানো ঠিক হয়নি। এটা আমাদের কালচার নয়।’
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার আসছে। তাই কয়েকটা মেয়ে ও ছেলেরা সাংস্কৃতিক গানটান গাইছে। তাও একটা রুমের মধ্যে। বাহিরেও না, রুমের ভেতরে।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘নতুন একটা মাদ্রাসা হয়েছে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেটা পরিদর্শনে গেছে। পরে রাতে মৌডুবি স্কুলে অবস্থান করছে। ওই স্কুলে ২৬ শে মার্চ উদযাপন করছে, পুরষ্কার বিতরণ করে নাই। ওই স্কুলের শিক্ষকরা স্যারকে সেই পুরষ্কার বিতরণের জন্য বলছে। আর তাদের ছেলেমেয়েরা নাচ ও গান শুনাবে বলছে।’
রাতে কক্ষ বন্ধ করে ছাত্রীদের নৃত্য উপভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘না, কোন প্রোগ্রাম ছিল না।’ প্রতিবেদকের কাছে এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষিত আছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা ওখানকার স্থানীয় বাচ্চা, ওরা নিজেরা একটু করছে। কোন সমস্যা আছে? স্কুলে রাতের বেলায় কক্ষের মধ্যে হলে সমস্যা কি? বেআইনি কিছু হয়েছে কিনা? আয়োজন আমি করিনি। এটা প্রতিষ্ঠান করছে। প্রতিষ্ঠানকে জিজ্ঞস করেন। প্রতিষ্ঠানের ছেলে পেলে করেছে, আমি ওদেরকে দুই একটা  উপদেশ বাণী দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ওই আয়োজন বন্ধের জন্য বলেছি, সে অনুযায়ী আয়োজনটি বন্ধ করা হয়। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানবো।’

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৫:২৬ ● ৭১৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ