সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্তদের আগুনে দগ্ধ হয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নুসরাত জাহান রাফিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
তাকে দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ওনাকে ওই ছাত্রীর অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছি। পরে তিনি নির্দেশ দেন দগ্ধ ছাত্রীর উন্নত চিকিৎসা জন্য সিঙ্গাপুরে কথা বলতে, যদি ওনারা ওই ছাত্রীকে নিতে রাজি হন, দ্রুত তাকে সেখানে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবেই, তবে প্রধানমন্ত্রী ওই ছাত্রীর উন্নত চিকিৎসার সিঙ্গাপুরে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন। যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলার জেরে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষের কয়েকজন গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন তার আর্তনাদ শুনে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা ছাদে ছুটে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর জেলা সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্যে, ২৭ মার্চ বেলা পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে সেই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। তখন সেই ছাত্রী নিজের সঙ্গে আরও ৩-৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে সিরাজউদ্দোলা অন্যান্যের ঢুকতে না দিয়ে কেবল সেই ছাত্রীকে নিয়ে যান। এরপর দরজা আটকে তিনি ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এমনকি পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর সিরাজউদ্দৌলা ওই ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। তখন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় থাকা ওই ছাত্রীর ছোট ভাই অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে যায়।
অধ্যক্ষ তখন তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। সেজন্য ছুটির আবেদন করতে এসে পড়ে যায়। সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। তখন সে স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসার অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে পুরো ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরের দিন সিরাজউদ্দৌলাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। দগ্ধ করার ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রীর ভাই জানায়, ৬ এপ্রিল আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিলো তার বোনের। সকালে মাদ্রাসায় গেলে একজন সেই ছাত্রীকে বলে যে, তার এক বান্ধবীকে কারা যেন ছাদে মারধর করছে। এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকাপরিহিত চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। একপর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান। ঢামেকে ভর্তি এই ছাত্রীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার চিকিৎসায় কাজ করছে ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
এফএন/কেএস