ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) একচ্ছত্র ক্ষমতা লাভ করেছে। যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ চার কিস্তিতে ছাড় করা হয়। আর অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। মূল উদ্দেশ্যই ছিল প্রকল্প ব্যয়ে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু অতিসম্প্রতি অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে সব ধরনের শর্ত তুলে দিয়েছে। ফলে প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) এখন থেকে কোনো অনুমোদন ছাড়াই প্রয়োজন অনুসারে সরাসরি অর্থ ছাড় ও ব্যবহার করতে পারবেন। বিগত ৩১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে পিডিদের ওই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ বলছে, উন্নয়ন প্রকল্পে গতি আনতেই এমনটি করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাতে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে এবং জবাবদিহি কমবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি আনতে চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে পিডিদের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। আর তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন লাগতো। কিন্তু তাতেও প্রকল্পের কাজে ধীরগতি কাটছে না এবং নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আর পিডিদের এমন যুক্তির ভিত্তিতেই তাদেও অর্থ ছাড় ও ব্যবহারের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের যে পরিকল্পনা করে তা প্রকল্পভিত্তিক হয়ে থাকে। ওসব প্রকল্প বাস্তবায়নে একজন করে পিডি থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বও পালন করেন। প্রকল্পগুলোর কোন খাতে কত খরচ হবে তা অনুমোদনের সময়ই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দরপত্র আহ্বান করে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয় মালপত্র কেনাকাটা, অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করা অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দিয়ে থাকে। তার সঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও সম্পৃক্ত। অর্থবছরকে চারটি ত্রৈমাসিকে ভাগ করে চার কিস্তিতে অর্থ ছাড় করা হয়। ওসব কেনাকাটা, বিল-ভাউচারে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে অর্থ ছাড় করার নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেন প্রকল্প পরিচালক। তবে ৩১ মার্চের প্রজ্ঞাপনের ফলে এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই পিডিরা অর্থ ছাড় ও ব্যবহার করতে পারবে। তবে প্রকল্পের শুল্ক ও ভ্যাট এবং ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয়ে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা প্রকল্প পরিচালকরা ছাড় করতে পারবে না। আর প্রকল্প সাহায্যের বর্তমান যে নিয়ম রয়েছে তা-ই বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঋণ ও অনুদান দাতা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শর্ত এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে অর্থ ছাড় হবে।
সূত্র আরো জানায়, অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত কর্তৃত্ব অনুযায়ী মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়নাধীন অনুমোদিত প্রকল্পের জিওবি অংশের বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ এবং প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো সম্মতির প্রয়োজন হবে না। ওই অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাড় হয়েছে বলে গণ্য হবে। প্রকল্প পরিচালকরা ওই অর্থ সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সংশোধিত অনুমোদিত বা অননুমোদিত প্রকল্পসহ অন্য সব প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের জারি করা অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৮-র বিদ্যমান পদ্ধতি অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে মন্ত্রণালয়গুলো ৭৫ শতাংশ অর্থ ছাড়ের অনুমোদন করতে পারতো। সেটাই ঠিক ছিল। তাকে শতভাগ করে দেয়া ঠিক নয়। কারণ জবাবদিহির একটা ব্যাপার আছে। তাছাড়া যে বরাদ্দ দেয়া হয়, রাজস্ব আদায়ে সমস্যা থাকলে তা অনেক সময় কাট করার দরকার হয়। পিডিরা যদি সব খরচ করে ফেলেন সেটা তখন কিভাবে সম্ভব হবে? তাছাড়া যারা ৯ মাসে ৭৫ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পারে না, তারা কিভাবে তিন মাসে শতভাগ অর্থ খরচ করবে তা বোধগম্য নয়।
অন্যদিকে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, সংশোধিত বাজেট থেকে প্রকল্প পরিচালকরা যাতে সরাসরি অর্থ ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য এটা করা হয়েছে। তাতে কাজ দ্রুত হবে। সময় বাঁচবে। তবে সেক্ষেত্রে জবাবদিহির কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ফান্ড রিলিজের সঙ্গে জবাবদিহির কোনো সম্পর্ক নেই।
এফএন/এমআর