বিনিয়োগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন

প্রথম পাতা » জাতীয় » বিনিয়োগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন
রবিবার ● ৭ এপ্রিল ২০১৯


বিনিয়োগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের অভাবে গ্রাহকের কাছে মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত বিপুল বিনিয়োগের অভাবেই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন পিছিয়ে পড়ছে। অভিযোগ উঠেছে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনে গুরুত্ব দিলেও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন নজর দিচ্ছে না। দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে অন্তত ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষে এতো বিপুল বিনিয়োগ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটির মতো বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। সরকার পর্যায়ক্রমে সবার ঘরেই বিদ্যুৎ দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুত বিভাগ দাবি করছে সারাদেশের অন্তত ৯৩ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বাকি ৭ ভাগ মানুষের ঘরে এ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে গ্রাহকের চাহিদা মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ সংম্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উন্নত দেশে বিদ্যুতের দুটি লাইন থাকে। কোন কারণে একটির বিদ্যুৎ চলে গেলে অপরটি আপনা থেকেই চালু হয়। এদেশেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সব গ্রাহকই ওই সুবিধার আওতায় নেই। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে। সকল গ্রাহকের জন্য ওই সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই কেবল গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে। বর্তমানে দেশের যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও এখনো লোডম্যানেজমেন্ট করে চলতে হচ্ছে। ফলে গ্রাহকের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, স্মার্টগ্রিড হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সব শেষ প্রযুক্তি। ওই প্রযুক্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে একজন গ্রাহক নিজে যেমন তার বিদ্যুৎ ব্যবহার তদারকি করতে পাওে, একইভাবে বিতরণ ব্যবস্থাও আধুনিক ও ত্রুটিহীন করা সম্ভব। বর্তমানে বিতরণ ত্রুটি খুঁজে পেতে সময় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আধুনিক ওই পদ্ধতিতে এক জায়গায় বসেই ত্রুটি চিহ্নিত করার পাশাপাশি সারানোও সম্ভব। কোন দুর্ঘটনায় যদি একটি বাড়ি বা এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায়, তবে সেন্সর ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্মার্টগ্রিডে খুব সহজেই ওই সমস্যা বোঝা সম্ভব। পাশাপাশি সম্ভব স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সমস্যার সমাধান করা। এক জায়গায় দুর্ঘটনার কারণে যেন অন্য এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থর ক্ষতি না হয় স্মার্টগ্রিড সে বিষয়ে সাহায্য করে।
সূত্র আরো জানায়, স্মার্টগ্রিড প্রথায় গ্রাহক মোবাইল প্ল্যানের মতোই নিজের বিদ্যুৎ প্ল্যান বেছে নিতে পারবে। তৈরি হবে একটি আধুনিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বাড়ি বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে মিটার বক্সে সিম কার্ডের মতো কার্ড থাকবে, যে কার্ডের মাধ্যমে ১৫ মিনিট অন্তর কত বিদ্যুত খরচ হয়েছে তার তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছে যাবে। চাহিদা কমে গেলে বা বৃদ্ধি পেলে আপনা আপনি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ওই পদ্ধতি শিল্প ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্মার্টগ্রিড প্রবর্তনের শুরুতে শিল্প এলাকা দিয়ে শুরু করেছিল। সারাদেশে স্মার্টগ্রিডের প্রবর্তন করা সম্ভব হলে পিক (সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) এবং অফপিক (সর্বনিম্ন চাহিদার সময়) বিদ্যুতের দামও পৃথকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব। তাতে মূল্য বিবেচনা করে গ্রাহক বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু স্মার্টগ্রিডসহ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে যে পরিমাণ ব্যয় করা দরকার, তা এখনই সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় দেখা যায়, বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে ’৪১ সাল পর্যন্ত প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে ’১৭ থেকে ’২৫-এর মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার, ’২৬ থেকে ’৩০ পর্যন্ত ৭ বিলিয়ন ডলার, ’৩১ থেকে ’৩৫ এর মধ্যে আর ৭ বিলিয়ন ডলার, বাকি ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন ’৩৬ থেকে ’৪১ সাল পর্যন্ত। যদিও সরকার ’১২ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে ওই সময়সীমা আরো ৩ বছর বাড়িয়ে ’১৫ করা হয়। কিন্তু এখন এসে বলা হচ্ছে আরো সময় প্রয়োজন। কিন্তু কতো দিন তা এখনও স্পষ্ট করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে বর্তমানে বিদ্যুৎ বিতরণ মূলত বিভিন্ন কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারি হলেও বিতরণ কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইনে পরিচালিত হয়। সরকার চাইছে বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব আদায় করে নিজেদের মতো করে চলুক। সরকার উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি দিলেও বিতরণ পর্যায়ে তা দেয় না। নতুন নতুন প্রকল্প করার জন্য ওসব কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে। যদিও আধুনিক ও মানসম্মত সেবা দেয়ার জন্য ওই অর্থে বিশদ প্রকল্প নেয়া কঠিন।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সরকারকে সেজন্য সময় দিতে হবে। মানুষের কাছে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ। ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের গ্রিডভুক্ত বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের উপরে, কিন্তু গ্রীষ্মে চাহিদা সর্বোচ্চ ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ বিতরণ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ খাত বিশৃঙ্খল হয়ে উঠে। বিতরণ গ্রিডকে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ বিতরণ করতে গিয়ে এখনো ওভারলোডের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। দেশে এখন পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির পাশাপাশি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ করছে। কোন কোম্পানিই এখন পর্যন্ত স্মার্টগ্রিডের কোন প্রকল্প হাতে নেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আধুনিক ওই বিতরণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহের তাগিদ রয়েছে। তবে পুরান বিতরণ ব্যবস্থার বদলে নতুন করে সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের দরকার, যা বিতরণ কোম্পানির একার পক্ষে বহন করা কঠিন হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৭:০৮ ● ৩৬৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ